বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গোপন ক্যামেরা

মির্জা মেহেদী তমাল

গোপন ক্যামেরা

একটি দুটি নয়, ১২০টি ভিডিও ক্লিপ তার কাছে। আড়ংয়ের নারীকর্মীদের ট্রায়াল রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় এসব ভিডিও করেছিল সে। এরপর যাদের ভিডিও করা হয়েছে, তাদের কাছে সেই ভিডিও পাঠাত ফেসবুকের মেসেঞ্জারে। কখনো অর্থ দাবি কখনো বিকৃত চাহিদার কথা জানাত তাদের। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি। এক বিক্রয়কর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ওই তরুণকে গ্রেফতার করেছে। তার নাম সিরাজুল ইসলাম সজীব। গত ২৫ জানুয়ারি কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এসআই ফারুক হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুন্দরী তরুণী। বাক্যবিলাসেও সাবলীল। গায়ে দামি পোশাক। হাতেও দামি মোবাইল। হাঁটা-চলায় যেন এক পরী। তার কথার জাদুতে মুগ্ধ হন সবাই। প্রেমের ফাঁদ পেতে ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিকে তার বাসায় ডেকে নেন। এরপর এ ‘পরীই’ কখনো গোপন ক্যামেরায় আবার কখনো প্রকাশ্যেই অশ্লীল ছবি তুলে ফাঁসিয়ে দেন। বিকাশে আদায় করে নেন লাখ টাকা। দীর্ঘদিন থেকে এভাবে প্রতারণা করে চলেছে নারী প্রতারকদের একটি চক্র। চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়া এলাকা থেকে রওশন আক্তার নামে এ চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার রওশন হালিশহর এলাকার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম হাউসে ভুয়া তথ্য দিয়ে চাকরির আবেদন করেন। এরপর নানা কৌশলে ফার্ম হাউসটির একজন কর্মকর্তার মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করেন। ব্ল্যাকমেইল করতে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ফেসবুকও বেছে নেন রওশন। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে নিজের সুন্দর ছবি দিয়ে এমডির কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান রওশন। কথা চলতে থাকে। ভাব-সাবও জমতে থাকে। চলে প্রেমের অভিনয়ও। মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কর্মকর্তাকে বেপারিপাড়ার বাসায় নিয়ে যান রওশন। গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি প্রার্থী, তাই রওশনের ভালোমন্দ জেনে নিয়োগ দিতে হবে। এ চিন্তা থেকে রওশনের পাতা ফাঁদে পা দেন কর্মকর্তা। রওশনের বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণ পর তারা ঘনিষ্ঠ হন। গোপন ক্যামেরায় চলে ভিডিও ধারণ। এরপর তার তিন সহযোগী দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পড়েন। কর্মকর্তাকে মারধর করে মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। এরপর কর্মকর্তার পাশে বসিয়ে রওশনের নগ্ন ছবি-ভিডিও করেন সহযোগী রনি। এরপর কর্মকর্তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা তাদের এনে দেন কর্মকর্তা। আরও এক লাখ না দিলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেন তারা। প্রতারণার শিকার ব্যক্তির অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ডিবি। পরে বেপারিপাড়ার একটি বাসা থেকে প্রতারক রওশন আক্তারকে গ্রেফতার করে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবনযাপনে এসেছে নতুন গতি। আবার এর অপব্যবহারে বাড়ছে মহাবিপদ। প্রযুক্তির অপব্যবহারে খুব সহজেই আপনি ও আপনার আপনজন হতে পারেন নোংরামির শিকার। বিপদ এড়িয়ে আপনি হয়তো বাঁচার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে অপরাধীরা আপনাকে ফাঁদে ফেলতে কোমর বেঁধে নিচ্ছে প্রস্তুতি। এসব ভয়ঙ্কর বিপদ এড়িয়ে চলতে সাবধানতার বিকল্প নেই। প্রযুক্তির হাত ধরে বদলেছে পুরনো অভ্যাস। কেনাকাটায় যোগ হয়েছে দারুণ সব সুযোগ। শপিং বা কেনাকাটায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভফঙ্কর বিপদ। বর্তমানে অধিকাংশ শপিং সেন্টারে থাকছে ট্রায়াল রুম। সেখানে পছন্দের পোশাকটি ঠিকঠিক গায়ের মাপে কি না তা দেখে নেওয়া যাচ্ছে। কিছু কুরুচিপূর্ণ মানুষ সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সমাজে ঘটাচ্ছে নানা রকম নোংরামি। প্রয়োজনীয় ট্রায়াল রুম বা পাবলিক টয়লেটে সেট করছে গোপন ক্যামেরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, একমাত্র সাবধানতা আর প্রয়োজনীয় সতর্কতাই পারে আমাদের অনাকাক্সিক্ষত বিপদ এবং বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর