বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সৎ সিভিল সার্জনকে ২০ দিনের মাথায় বদলি

সুনামগঞ্জে সমালোচনার ঝড়

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

দুর্নীতি প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে সুনামগঞ্জের সির্ভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের ২০ দিনের মাথায় ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে কোনো কারণ ছাড়াই আকস্মিক বদলি করে নেওয়ায় জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তার বদলির আদেশ আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা গেছে, জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছুউদ্দিনকে সুনামগঞ্জের নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে করা হয়েছে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন। বাবার টিউশনির টাকায় ডাক্তার হওয়া ডা. কল্লোল যোগদানের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং কাউকে দুর্নীতি করতে দেবেন না। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগকে জনবান্ধব ও সেবামুখী করারও উদ্যোগ নেবেন। তার এ ঘোষণায় আশাবাদী হয়েছিল সাধারণ মানুষ। সিভিল সার্জনের আকস্মিক বদলির ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সিভিল সার্জনকে ২০ দিনের মাথায় বদলি করে নেওয়ার খবরটি তিনি জেনেছেন। আজ এ নিয়ে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।

সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলের হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এই বদলির সমালোচনা করে বলেন, ‘এই বদলি সম্পূর্ণরূপে অন্যায়। এতে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে। আমি এ নিয়ে সংসদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলে বদলির আদেশ স্থগিত করার দাবি জানাব।’ এদিকে, দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসা সিভিল সার্জনকে এত কম সময়ের মধ্যে বদলি করে নেওয়ার পেছনে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনসহ সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন সূত্র জানায়, এর নেপথ্যে বিএমএ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার হাত রয়েছে। যাকে সুনামগঞ্জে দেওয়া হচ্ছে তার ভাবমূর্তি ক্লিন নয়। সূত্র জানায়, ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোল সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর দুর্নীতি বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় নিজেদের যুগ যুগ ধরে চালিয়ে যাওয়া অপকর্ম বন্ধের আশঙ্কা দেখা দেয় দুর্নীতিবাজ চক্রের। তারা একাট্টা হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করে ২০ দিনের মাথায় তাকে বদলি করিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। আকস্মিক এই বদলির আদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর তীব্র সমালোচনা করছেন তারা। ঢাকায় অবস্থানরত সুনামগঞ্জের বিশিষ্টজনেরাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই বদলির বিরোধিতা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দুর্নীতিবাজ চক্রের তদবিরে একজন সৎ সিভিল সার্জনের বদলি স্থগিতের দাবি জানান তারা। বদলির আদেশ স্থগিতের দাবিতে আজ (বৃহস্পতিবার) শহরে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। এদিকে, সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের পর ডা. কল্লোল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনামগঞ্জে আসার আগেই সদর হাসপাতালের একটি দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে ছিলাম। কাজেই হাসপাতাল সম্পর্কে আগে থেকে আমার কিছু ধারণা আছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা আমার রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। এরপর মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হব। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলা তৈরি করে দেওয়া হবে আমার মূল লক্ষ্য। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। আমরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসক বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাব।’

সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেছিলেন, ‘আমার প্রথম কাজ হবে সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা। সবাই নিয়মমতো অফিসে আসছেন কিনা তা খতিয়ে দেখব। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের পোশাক বাধ্যতামূলক করব। হাসপাতালের যেসব কর্মকর্তা ব্যক্তিগত পোশাক পরে আসবেন তাকে দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কারণ সবার পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কে চিকিৎসক, কে নার্স, কে কর্মকর্তা এবং কে কর্মচারী পোশাকেই নির্ধারণ হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের অবশ্যই নেমপ্লেট ব্যবহার করতে হবে।’

সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখানে সৎভাবে কাজ করতে এসেছি। আমাকে সরকার যে বেতন দেয় তা দিয়েই সংসার চালাই। আমি হারাম এক টাকাও খাই না, কেউ খাওয়াতে পারবে না। আমার বাবা উপসচিব ছিলেন। তবু তিনি টিউশনি করেছেন। কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। আমি যদি দুর্নীতি করি তাহলে কলঙ্কের দাগটা আমার বাবা ও পরিবারে লাগবে। আমার বাবা এবং পরিবারের গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগতে দেব না আমি।’

সর্বশেষ খবর