রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রতিক্রিয়া

ভোটের নামে তামাশা হয়েছে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের নামে তামাশা হয়েছে : ফখরুল

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিকালে ভোট গ্রহণের আধঘণ্টা পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে যে নির্বাচন হয়েছে আমরা মনে করি, তা এতটুকু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ভোটের নামে  তামাশা হয়েছে।’ নির্বাচনের ফলাফলের পর বিএনপির অবস্থান জানানো হবে বলে জানান ফখরুল। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান; যা নির্বাচনবিধির মধ্যে পড়ে না, বরং নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান দলীয় সন্ত্রাসীদের কেন্দ্র দখল, বিএনপি দলীয় এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত ২৯ জানুয়ারির পরিপত্রের ভাষ্য তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট কক্ষসমূহের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের ১%-এর অতিরিক্ত ভোটারের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণসংক্রান্ত পিন নম্বর দুপুরের পর ভোট কেন্দ্রগুলোয় দিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে এখন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের আঙ্গুলের ছাপে ভোটার উপস্থিতি না হলেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক ওই কেন্দ্রের মোট ভোটের যতসংখ্যক প্রয়োজন ততসংখ্যক ভোটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির পথ ক্ষমতাসীন দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমরা যেটা আশঙ্কা করেছি সেটাই হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যারা এ বাধা অতিক্রম করে কেন্দ্রে গিয়েছেন তাদেরও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, মারধর করে বের করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছেন, এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে, এজেন্টদের তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এ কথা বলে তিনি সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের উসকে দিয়ে সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন। একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব নিজেই বলেছেন, এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি সেন্টারে। সিইসি নিজে সাতবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে মেলাতে না পারার কথাও বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, বিএনপির যেসব পোলিং এজেন্ট নানা বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে গিয়েছেন তাদের দুপুর ১২টার মধ্যেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে ২০০-২৫০ জন বহিরাগত জড়ো করে রাখা হয়েছে। সমগ্র ঢাকা শহরে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সৃষ্টি করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার কারণে কেন্দ্রে যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলোকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের প্রতীক ছিল না। ফলে ভোটাররা ভোট প্রদান করতে পারেননি। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে শনাক্তকরণের পর ভোট না দিতে দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের সঙ্গে ভোটকক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক স্থানে সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের ছবি তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর