সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব জানুক আমাদের শিল্প-সাহিত্য

একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্ব জানুক আমাদের শিল্প-সাহিত্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে -বাসস

রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গতকাল বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের মান আরও উন্নত করে সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, বিশ্ব জানুক আমাদের শিল্প-সাহিত্য। তাই অমর একুশে বইমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে চাই। বাসস। এ বছর বাংলা একাডেমির বইমেলা ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ’ পালন উপলক্ষে জাতির পিতার অমর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দশ কবি ও সাহিত্যিকের কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রচিত তৃতীয় বই ‘আমার দেখা নয়া চীন’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। মেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘আমাদের সাহিত্য আরও অনুবাদ হোক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক, আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক, সেটাই আমরা চাই।’ একুশে বইমেলার আবেদনের কথা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একুশের এই বইমেলা, একে গ্রন্থমেলা বলেন আর বইমেলা বলেন, বইমেলা বলতেই আপন আপন মনে হয় বেশি।’ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় ছাত্রজীবনের মতো বইমেলায় স্বাধীনভাবে বেশি সময় কাটাতে না পারায় আক্ষেপও ঝরে তাঁর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘এই বইমেলা বা গ্রন্থমেলা এটা আমাদের প্রাণের মেলা। যদিও সত্যি কথা বলতে কি, প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবসময় এটাই দুঃখ লাগে যে- এখন আর সেই স্বাধীনতা নেই। আগে ছাত্রজীবনে এখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম এবং ঘুরে বেড়াতাম বই মেলায়। পুরো সময়টা পারলে থাকতাম। কিন্তু এখন সেটা আর হয়ে ওঠে না। এই একটা দুঃখ এখনো থেকে যাচ্ছে। সেই স্বাধীনতা আর পাচ্ছি না। তারপরও আমি বলব, এই বইমেলা আসলেই ভালো লাগে।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্তারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় মাকিদ হায়দার, উপন্যাসে ওয়াসি আহমদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরচিস সরকার, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, নাটকে রতন সিদ্দিকী, কিশোর সাহিত্যে রহিম শাহ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বিজ্ঞান উপন্যাসে নাদিরা মজুমদার, ভ্রমণ সাহিত্যে ফারুক মইনউদ্দিন এবং লোকসাহিত্যে সাইমন জাকারিয়া।

গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ সপ্তম খন্ডের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী : বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন শেষে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) স্টলে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’র সপ্তম খন্ডের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাতে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’র সপ্তম খ- তুলে দেন সিআরআই ট্রাস্টি ও গ্রন্থটির প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বইটি হাতে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটা ত সেই বই, তাই না।’

প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তির কারণ, বইটির সম্পাদনায় সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল তাঁর। শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি গ্রাফিক নভেল মুজিবের সপ্তম খন্ডে উঠে আসে তৎকালীন দুর্ভিক্ষের চিত্র। আর সেখানে মানুষগুলোর অবয়ব পরিবর্তন করে রুগ্ন ও শীর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যেমনটা দুর্ভিক্ষের সময় ছিল। শুধু তাই নয়, বইটির সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম ভুলগুলো খুঁজে বের করে তা ঠিক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এক  সেট ‘মুজিব’ গ্রাফিক নভেল তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এ সময় উপস্থিত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিদের হাতে এক সেট করে বই তুলে দেওয়া হয়।

আইডিইবি জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার জনগণকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে কাজ শুরু করেছে। কারণ কারিগরি ভিত্তিতে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলেছে, বিশ্বে খুব শিগগিরই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটবে। এই বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আমাদের দক্ষ মানব সম্পদ দরকার। এ লক্ষ্যেই সরকার কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ২৩তম আইডিইবি জাতীয় সম্মেলন এবং ‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজি অ্যান্ড এডপটিং আইআর ৪.০’ বিষয়ক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন করার সময় এ কথা বলেন।

 তিনি আরও বলেন, জনগণকে দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর