সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি ফরিদপুর

শক্তিশালী আওয়ামী লীগ দিশাহারা বিএনপি

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুর জেলায় আওয়ামী লীগ এখন সংগঠিত। তবে জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতে চরম দলীয় কোন্দল রয়েছে। কেবল সদর উপজেলায় তেমন কোন্দল নেই। ফলে বিভিন্ন সময় অন্য উপজেলাগুলোয় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুর জেলায় বিএনপির তেমন কোনো কোন্দল না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ চাপের মুখে বা কেউ আখের গোছাতে হাত মিলিয়েছেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে।

ফরিদপুর সদরে আওয়ামী লীগ বেশ সংগঠিত। এ আসনের সংসদ সদস্য দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দিকনির্দেশনায় অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখানে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী। তবে অন্য আটটি উপজেলায় রয়েছে তীব্র কোন্দল। বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন গঠিত। এর মধ্যে মধুখালীতে দুটি গ্রুপ। একটি গ্রুপ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানের, অন্যটি বর্তমান এমপি মনজুর হোসেন বুলবুলের। বোয়ালমারী উপজেলায় তিনটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।  সাবেক এমপি কাজী সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি আবদুর রহমান ও বর্তমান এমপি মনজুর হোসেন বুলবুল গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া আরও ছোট কয়েকটি গ্রুপ এখানে বিদ্যমান রয়েছে। ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলায় দলের বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে সংসদ উপনেতার ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর মদদপুষ্ট নেতাদের নিয়েই চলছে রাজনীতি। দলের একাংশের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নেতাদের প্রাধান্য দিয়েই আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। দলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। ফরিদপুর-২ আসনে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বড় ছেলে আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী দীর্ঘদিন রাজনীতির কলকাঠি নাড়লেও তাকে বাদ দিয়ে এখন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে। ফলে দুই ভাইয়ের সমর্থকদের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। গত দুবারের নির্বাচনে এ আসন থেকে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। এ আসনের তিনটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি একদিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন কাজী জাফরউল্লাহ, অন্যদিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বতন্ত্র এমপি নিক্সন চৌধুরী। তিনটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এ কারণে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ফরিদপুরে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল বিএনপি। নির্বাচনের পর বিএনপির অবস্থা নাজুক হতে থাকে। কোন্দলের কারণে দলের শক্তিশালী অবস্থান কমতে থাকে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দলের সম্মেলন না হওয়ায় হতাশা নেমেছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে কয়েকটিতে কোন্দল রয়েছে। নেতৃত্বের অভাবে দলটির নেতা-কর্মীরা এখন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে রাজপথে দেখা গেলেও তারা এখন মামলা-হামলার কারণে অনেকটা নীরব। গত ৫ মাস আগে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনো কমিটি গঠন হয়নি। সর্বশেষ বিলুপ্ত হওয়া ১৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ১২ জন মারা গেছেন। ২৬ জন নেতা দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বাকি ৭০ ভাগ নেতা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। যে ১০/১৫ জন সক্রিয় নেতা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে শতাধিক। এসব নেতা পুলিশের হয়রানির ভয়ে বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপির মতো একটি দলের জেলা কমিটি নেই ৫ মাস ধরে। ফলে দল যে টিকে রয়েছে তা-ও বা কম কী।

সর্বশেষ খবর