বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বন-পাহাড়ের লাল কুকুর

মোস্তফা কাজল

বন-পাহাড়ের লাল কুকুর

দিন দিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ের লাল কুকুরের চাহিদা বাড়ছে। এ প্রাণী নিখুঁত শিকারে পারদর্শী। এ বিরল ও বিপন্ন শিকারি প্রাণীর প্রজননে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। এ লাল কুকুরকে অনেকে বন কুত্তা, রাম কুত্তা বা ডোল নামেও পরিচিতি পেয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা জংলি কুকুর, চ্যু, সোনহা, সোন বা ডোল নামে পরিচিত। এর পরিবারভুক্ত প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম পাহাড়ি কুকুর। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন ও রাশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশেই এদের দেখা যায়। একসময় এদের সচরাচর দেখা গেলেও বর্তমানে একেবারেই বিরল ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রাম কুত্তা শিয়াল, কুকুর ও নেকড়ের জাত ভাই। তবে চেহারায় শিয়ালের সঙ্গেই মিল বেশি। আকারে নেকড়ে ও শিয়ালের মাঝামাঝি। লম্বায় ৪৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার হয়। লেজ ২০ থেকে ২৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ওজন ১০ থেকে ২০ কেজি। পা খাটো, লেজ ঝোপালো ও নাকের ওপরের অংশ খানিকটা উঁচু। মাথা ও দেহের ওপরের অংশের লোম বাদামি-লাল। ঋতুভেদে রং হালকা থেকে গাঢ় হতে পারে। কানের ভিতরটা, মুখের নিচ, গলা ও দেহের নিচের অংশ সাদা। ঝোপালো লেজের আগা কালো। বন কুকুর সামাজিক প্রাণী। এ প্রাণী দলবদ্ধভাবে বসবাস করে থাকে। দিনের বেলা শিকার করে। দলে ২ থেকে ৩০টি পর্যন্ত কুকুর থাকতে পারে। এরা সচরাচর মাঝারি আকারের প্রাণী যেমন- হরিণ, শূকর, ছাগল ইত্যাদিকে আক্রমণ করে।

 প্রয়োজনে বনগরু বা মহিষের মতো বড় পশুকেও আক্রমণ করতে পারে। বন কুকুরের দল কোনো প্রাণীকে সামনে-পেছনে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করে বা তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাড়াতে তাড়াতে ক্লান্ত করে মারে। এরা যে প্রাণীকে টার্গেট করে তাকে না মারা পর্যন্ত ছাড়ে না। তাড়ানো অবস্থাতেই জীবিত প্রাণীটিকে খাবলে খেতে থাকে। আর এভাবে ১০ থেকে ১৫টি কুকুর মিলে খুব কম সময়ের মধ্যেই যে কোনো প্রাণীকে সাবাড় করে ফেলতে পারে।

 খাদ্য স্বল্পতার সময় ফল ও সরীসৃপও খেয়ে থাকে এরা। কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না বরং শিস দেওয়ার মতো শব্দ করে ডাকে। এরা সচরাচর ভালুক, চিতাবাঘ বা বাঘকে এড়িয়ে চলে। তবে আক্রান্ত হলে তাদেরকেও ছাড়ে না। বন কুকুর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বা পাহাড়ের গুহায় বাস করে। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী কুকুর ৬০ থেকে ৬৫ দিন গর্ভধারণের পর মাটির গর্ত বা পাহাড়ের গুহায় চার থেকে ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে। শুধু মা-বাবাই যে বাচ্চা লালন-পালন করে তা নয় বরং একাজে দলের অন্য সদস্যও সাহায্য করে। প্রায় এক বছর বয়সে বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক হয়। এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর। খাগড়াছড়ি জেলায় এ প্রাণীর বংশ বৃদ্ধিতে প্রজনন কেন্দ্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর