বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের নির্দেশে বন্ধ ফরিদপুরে খাল খনন

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে একটি খালের খননকাজ। ফলে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এদিকে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ করতে না পারলে যেটুকু কাজ হয়েছে তাও বিনষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। জানা গেছে, ডেল্টা প্ল্যানের অংশ হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় চরভদ্রাসনের পদ্মা নদী থেকে আড়িয়াল খাঁ নদের সংযোগ খাল পুনঃখনন হিসেবে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে প্রায় ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদী থেকে জাকিরেরসুরা হয়ে পাশের রামনগরে আড়িয়াল খাঁ নদ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার খালটি খননের কাজ পায় মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তারা এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে খাল খননের কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় কিলোমিটার খননের পর গত ২৯ জানুয়ারি রাতে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। খনন কর্মীরা অভিযোগ করেন, ২৯ জানুয়ারি রাতে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খান দলবল নিয়ে এসে তাদের কাজ বন্ধ রাখার জন্য শাসিয়ে যান। এ সময় তাদের হুমকি-ধমকি এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইকবাল হোসেন জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমে এ কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ তখন পদ্মার পানি বেড়ে যাবে এবং খালে পানি থাকার কারণে খনন কাজ করা যাবে না। তিনি জানান, এতে যেটুকু কাজ তিনি সম্পন্ন করেছেন তাও নষ্ট হয়ে যাবে। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ ২১ জন বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাউবো ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)সহ ১৫ জনকে বিবাদী করে হাই কোর্টে একটি রিট করেন। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২৯ জানুয়ারি রিটটির শুনানি শেষে রিটকারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, উচ্চ আদালত খাল খননের কাজ বাস্তবায়নে কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই আবুল কালাম আজাদ রাতের আঁধারে দলবল নিয়ে এসে খনন কাজ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ তুলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি নিজে খাল খননের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ অথবা কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দেননি। তিনি জানান, তারসহ আরও অনেকের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে ওই খালে। তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য এলাকাবাসী কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে খালের জমি নির্দেশনা করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ার পরে খনন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। যখন ওই লাল পতাকা টাঙানো হয়েছিল তখনই তারা আপত্তি জানাতে পারতেন। কিন্তু এখন কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেষ হওয়ার পর এভাবে কাজ বন্ধ করে দেওয়া মানে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত করে দেওয়া।

সর্বশেষ খবর