আজ শুক্রবার। কর্মব্যস্ত নগরীর ব্যস্ততায় ছেদ পড়বে। ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে নগরজীবনের বাসিন্দারা। আর এর মধ্য দিয়ে প্রাণের গ্রন্থমেলায় কেটে যাবে গ্রহণের কাল। কয়েক দিন যে আশাতেই প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলেন প্রকাশকরা আজ সেই কাক্সিক্ষত শুক্রবার। মেলা জমে উঠবে ও পাঠকদের ভিড়ে মুখরিত হবে। সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতিতে মেলাজুড়ে সফলতার চিহ্ন ফুটে উঠবে আজকের গ্রন্থমেলায়। গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৫ম দিনে এমনটিই বলছিলেন বেশিরভাগ প্রকাশক। মেলার প্রথম শিশুপ্রহর আজ। যে কারণে বড়দের বইয়ের পাশাপাশি আজ শিশুচত্বরেও থাকবে প্রাণের উচ্ছ্বাস। বাবা-মায়ের হাত ধরে পছন্দের বইটি কেনার পাশাপাশি আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহরের সিসিমপুরে ইকরি বিকরির সঙ্গে দুরন্তপনায় মেতে উঠবে ছোট্ট সোনামণিরা। গতকাল বড়দের স্টলে খুব একটা ভিড় লক্ষ্য করা না গেলেও শিশুচত্বরে আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চত্বরের প্রকাশনা সংস্থা ঝিঙ্গেফুলের স্বত্বাধিকারী গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, আমাদের স্টলে মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। কাল প্রথম (আজ) শুক্রবার ও প্রথম শিশুপ্রহর থেকে বিকিকিনি বাড়বে বলেই মনে করি। দ্য পপ আপ ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী রুমানা বলেন, প্রথম শুক্রবার ও প্রথম শিশুপ্রহর থেকে মেলা জমে উঠবে। এবারের মেলা নিয়ে হতাশ নন শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থার ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, লোক কম থাকলেও আমাদের বিক্রি বাড়ছে। কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী জানালেন এবারের মেলায় তাদের প্রায় শতাধিক বই প্রকাশ হচ্ছে। নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৮টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নূহ-উল-আলম লেনিনের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই ‘রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব’, আগামী প্রকাশ করেছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা’, কথাপ্রকাশ থেকে ড. এম আবদুল আলীমের স্মৃতিকথা ‘ভাষা সংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ’, শোভা প্রকাশ থেকে সৈয়দ শামসুল হকের কিশোর কবিতার বই ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা’, একই প্রকাশনা থেকে সন্জীদা খাতুনের প্রবন্ধের বই ‘রবীন্দ্র কবিতার গহনে’, অবসর প্রকাশনা থেকে রকিব হাসানের গোয়েন্দা কাহিনী ‘দানব রবিন’ প্রভৃতি।
মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত ‘রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহীত উল আলম। আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান এবং সাহেদ মন্তাজ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন নূহ-উল-আলম লেনিন। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। প্রাবন্ধিক বলেন, আলোচ্য বইয়ে লেখক কীভাবে শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়া জন্মস্থান থেকে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন তার একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রণিধানযোগ্য রাজনৈতিক আলেখ্য তৈরি করেছেন। শেখ মুজিব তাঁর যৌবনদীপ্ত সময়ে পাকিস্তান-আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান হবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হৃদয়ঙ্গম করেন যে, নতুন দেশটি দিয়ে বাঙালির স্বপ্ন পূরণ হবে না। আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত অত্যন্ত চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত এ গ্রন্থে। শুরু থেকেই বাঙালি এবং বাংলাদেশ ছিল বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও মননে। কলকাতায় রাজনীতির অভিজ্ঞতা তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনের অভিঘাত হিসেবে কাজ করেছে এবং তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনাকে শানিত করেছে। কাজেই বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে হাতেখড়ি মূলত বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জনের পথে অভিযাত্রার সূত্রপাত। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বাংলার মানুষের ভালোবাসা ও বাংলার মাটির কোমলতাই বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে নির্মাণ করেছিল এবং তাঁর ভিতর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। মানুষের মনন ও চেতনাকে স্পষ্টরূপে বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তিনি বাঙালির জাতির মহান রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের উত্থানকে বুঝতে নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ, ঝর্ণা রহমান, ফারুক মাহমুদ ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি করেন রেজিনা ওয়ালী, মীর বরকত এবং নাজমুল আহসান। সংগীত পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, লতিফ শাহ, রুশিয়া খানম ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব।শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।
অরপি আহমেদের চার বই : লাকসাম প্রতিনিধি ফারুক আল শারাহ জানান, গ্রন্থমেলায় কুমিল্লার লাকসামের প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক ও সাহিত্যিক অরপি আহমেদের চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হচ্ছে, ‘অগ্নিঝরা স্লোগান জয়বাংলা’, ‘ক্ষণিক দাঁড়াও পথিক’, ‘জ্বীন পরি ভালোবাসা’ এবং ‘ধামীয়ান’। চারটি বইয়ের মধ্যে অগ্নিঝরা স্লোগান জয়বাংলা ও ক্ষণিক দঁড়াও পথিক বই দুটি প্রকাশ করছে সময় প্রকাশন এবং জ্বীন পরি ভালোবাসা ও ধামীয়ান প্রকাশ করছে অনন্য প্রকাশনী। বইগুলো গ্রন্থমেলার সময় প্রকাশন ও অনন্য প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।