শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি কিশোরগঞ্জ

আওয়ামী লীগে নেই চেইন অব কমান্ড, বিএনপি গতিহারা

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে চেইন অব কমান্ডের খুব অভাব। জেলা নেতাদের অনেকেই বলয়-ব্যস্ততায় সমর্পিত। তারা নিজ নিজ বলয় তৈরিতে ব্যস্ত। যে যার মতো কাজ করছেন। ফলে জাতীয় ও স্থানীয় কর্মসূচিতে আগের মতো আর লোক সমাগম দেখা যায় না। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বর্তমান অবস্থায় তাদের হতাশার কথাই জানালেন। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি পাচ্ছে না বিএনপি। দলের গুটিকয় নেতার ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচিগুলোতে লোক সমাগম হয়। তাও অনেকটা ফটোসেশনভিত্তিক ও দায়সারা গোছের। নেতাদের কারও জোরালো কোনো ভূমিকা নেই আন্দোলনে- এ অভিযোগ দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। আওয়ামী লীগ : প্রায় ২০ বছর পর ২০১৬-এর ফেব্রুয়ারিতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহানকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট এম এ আফজলকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু ও কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপির রয়েছে নিজস্ব বলয়। জেলা কমিটির বাইরে রাষ্ট্রপতির মেজ ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনের নেতৃত্বেও রয়েছে একটি অংশ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ূনকে নিয়েও নতুন করে পৃথক বলয় সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এমন দ্বিধাবিভক্তি দলের তৃণমূলেও বিদ্যমান। এসবের রেশ টানতে হয়েছে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অনেক উপজেলায় কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হন। এতে জেলা নেতাদের কারও কারও ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা পদবঞ্চিত হলেও অনুপ্রবেশকারী অনেকেই পদ-পদবি কব্জা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকাউদ্দিন আহাম্মদ রাজন বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস ছিলাম। বাপ-দাদা থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরপরও জেলা আওয়ামী লীগে কোনো পদ পেলাম না। বরং অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাভোগী অনেকেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগেই। এখনো বেশিরভাগ উপজেলা কমিটির সম্মেলন করতে পারেনি। কোনো কোনো উপজেলা কমিটির মেয়াদ ১৫/২০ বছর হয়েছে। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে সম্মেলন করতে পারছে না। সম্মেলন না হওয়ায় ত্যাগীরা দলে স্থান পাচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি কোন্দলে জর্জরিত করিমগঞ্জ উপজেলা কমিটি। ইতিপূর্বে করিমগঞ্জের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলনে একাধিক গ্রুপ থাকায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। প্রায় ১৮ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কাজ চলছে। গ্রুপিং কোন্দলের কারণে পাকুন্দিয়া উপজেলা কমিটিরও সম্মেলন হচ্ছে না দীর্ঘদিন। তবে সম্প্রতি এ কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা কমিটি। সদর উপজেলা কমিটিও চলছে ২৩ বছর ধরে। বিএনপি : অপরদিকে জেলা বিএনপির কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে শরীফুল আলমকে সভাপতি ও মাজহারুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক জেলা সদরে অবস্থান করলেও সভাপতির বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলায়। সভাপতিসহ জেলা নেতাদের অনেকেই বেশিরভাগ সময় জেলার বাইরে অবস্থান করেন। দলীয় কর্মসূচিতে নেতাদের অংশগ্রহণ থাকলেও অনেকেরই জোরালো ভূমিকা নেই। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও নেতাদের কেউ কেউ নিজস্ব বলয় সৃষ্টিতে ব্যস্ত। তাই, আন্দোলনে গতি আসছে না। অনেকটা দায়সারা গোছের ও ফটোসেশনভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া দলের বিগত কমিটির অনেক শীর্ষ নেতাকে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান কমিটির সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় না। তাদের কেউ কেউ পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। আবার কেউ কেউ একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেন, কর্মসূচির বিষয়ে জেলা পর্যায় থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয় না। নিজ উদ্যোগেই তিনি কর্মসূচি পালন করে থাকেন। হীনমন্যতা থেকে জেলা নেতারা হয়তো তাকে সম্পৃক্ত করতে চান না, এমন অভিযোগ করেন তিনি। তবে তিনি সব কর্মসূচিতে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান বলে জানান। অন্যান্য দল : কিশোরগঞ্জে জাতীয় পার্টির তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। এমনকি জোটগতভাবেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে তাদের খুব একটা অংশ গ্রহণ নেই। এখানেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কোন্দলের কারণে সম্প্রতি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে মুজিবুল হক চুন্নু এমপিকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব উপজেলা ও পৌরসভায় কমিটি থাকলেও বেশিরভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। বাম দলগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদের তৎপরতা রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এ দুটি বাম দলকেই রাজপথে দেখা যায়। জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রম না চালালেও অঙ্গ ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

সর্বশেষ খবর