শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থী জটিলতা দুই দলেই

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থী জটিলতা দুই দলেই

ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে সিটি ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি ভোটের তফসিল ঘোষণা হবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিতরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ঘিরেই চলছে আলোচনা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনই দলের মনোনয়ন দৌড়ে গিয়ে রয়েছেন। এর বাইরেও দুই দলের  বেশ কয়েকজন মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি ভোটে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দলীয় প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় সর্বাগ্রে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এবার হিসাবও পাল্টে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মরহুম সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও আলোচনায় রয়েছেন। নওফেল নিজে আগ্রহী না হলেও দলীয় সভাপতির সিদ্ধান্ত পেলে নির্বাচন করবেন। এদিকে বিএনপিতে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া মহানগরের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর আছেন আলোচনায়। চট্টগ্রাম সিটিতে তৃতীয় প্রজন্মের প্রার্থী মনোনয়ন আসতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল আলোচিত হলেও দুদকের মামলায় বাধা হচ্ছে সেই সম্ভাবনাও। ফলে নতুন মুখের সন্ধানে আছে বিএনপি। দলের নেতা-কর্মীদের আলোচনায় নাম এসেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমেরও। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোারেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম সিটি ভোটে বিএনপি অংশ নেবে কি না- তার এখনো কোনো স্পষ্ট  ঘোষণা আসেনি। ২০১০ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ‘হ্যাটট্রিক’ মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম।? গত নির্বাচনে মনজুর বিএনপির প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত ভোট চলাকালে বেলা ১১টা না পেরোতেই সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বয়কট করে দল থেকে সরে দাঁড়ান। মেয়র হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। এবার বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় আছেন বর্তমান মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত।’

দীর্ঘদিন দৌড়ের ওপর থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের চেয়ে মনোবল চাঙ্গা বেশি আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাসীন এ দলটি নির্বাচনকে ঘিরে বেশ নির্ভার। দলে বিভক্তি অব্যাহত ও বিএনপির তুলনায় মাঠের সংকট নানামাত্রিক হলেও আওয়ামী লীগের গোছানো রয়েছে মাঠ। দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মাঠের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের হাতে। যদিও মহিউদ্দিনপুত্র নওফেলের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে পৃথক বলয়। দুই পক্ষের রেষারেষিতে অঘটন আশঙ্কায় মহানগর কমিটির সম্মেলন এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করে কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী-বঞ্চিতরা বঞ্চিতই আছেন। বিএনপির অবস্থাটা ভিন্ন। বিএনপির এক নেতার রয়েছে একাধিক পদ। তবু চসিক ঘিরে মাঠে চাঙ্গা ক্ষমতাসীন দল। মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও সাবেক-বর্তমান ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে আসছে একঝাঁক নতুন মুখ। আওয়ামী লীগের আলোচনায় সম্ভাব্য অন্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। দলের বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে আলোচনায় আসেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও একুশে পদকের জন্য মনোনীত সুফি মিজানুর রহমান, শিল্পপতি শওকত আলী চৌধুরীও। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। তাই তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী। মেয়র হিসেবে সর্বজনীন সদ্ভাব নিয়ে থাকা ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা জানান, গেল পাঁচ বছরে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন ও সেবা খাতে বরাদ্দ পেয়েছে চসিক। প্রায় ৩২০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া আছে ৫ হাজার কোটি টাকার আরও অন্তত পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। নগরবাসীকে এ ধারাবাহিক উন্নয়ন ও সেবা দিতেই তিনি ফের সুযোগ চান। এদিকে আওয়ামী লীগের আলোচিত সম্ভাব্য অপর প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। ঢাকা দক্ষিণের তাপস এমপির মতো চট্টগ্রামের এমপি নওফেলের মনোনয়ন জুটলে বিস্মিত হওয়ার কিছু  নেই। সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

সর্বশেষ খবর