রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
চসিকের নতুন খাল

অনুমোদনের সাড়ে পাঁচ বছর পর খনন প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১০ সালে নতুন খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্প একনেক অনুমোদন দেয়। কিন্তু ভূমি জটিলতা ও অর্থ সংকটসহ নানা কারণে সাড়ে পাঁচ বছরেও খাল খননের কাজ শুরু হয়নি। তবে রবিবার চসিক আনুষ্ঠানিকভাবে খাল খনন কাজ উদ্বোধন করলেও এখনো খনন প্রক্রিয়ার দাফতরিক প্রস্তুতিই শেষ করা হয়নি। ফলে খননের ভৌত কাজ এখনো শুরু হয়নি। পক্ষান্তরে খননকাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণ। ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার এবং প্রস্থ সাত ফুট। জানা যায়, খাল খননে ভৌত কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া এবং সার্ভে সংস্থার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ স্থান নির্ধারণে কাজ চলছে। তবে মাটিকাটাসহ অন্যান্য কাজ কখন শুরু হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন খাল খননের কোনো বিকল্প নেই। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, এলএ মামলা ও অর্থ সংকটসহ নানা  কারণে কাজটি অগ্রসর হয়নি। আমরা পর্যায়ক্রমে সব কাজ শেষ করছি। ইতিমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার। শিগগিরই মাঠপর্যায়ে মাটিকাটার কাজ করা হবে।’

চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আলোচিত নতুন খাল খনন প্রকল্পে ভূমি জটিলতা দেখা দেয়। তাই সমস্যা নিরসনে চসিক ভূমিমালিকদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের প্রায় ৩০০ ভূমিমালিকের সঙ্গে বৈঠক করে চসিক। বৈঠকের মাধ্যমে ভূমি জটিলতা নিরসন করা হয়। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি  ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকার প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকায় প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায়নি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চসিক। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পরে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি পুনরায় সংশোধন করে ৩৭৬ কোটি ১৩ লাখ টাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্তমতে সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের মহাপরিকল্পনায় নগরীতে নতুন তিনটি খাল খননের প্রস্তাব করা হয়। পরে চসিক নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে। কমিটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। নতুন খালটি নগরীর বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে চাক্তাই খাল-শাহ্? আমানত সংযোগ সেতু রোড-নূরনগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া-পূর্ব বাকলিয়া-বলির হাট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশবে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে উভয় পাশে ২০ ফুট করে দুটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর