রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ইলিশ মৌসুম ফিরে এসেছে

রাহাত খান, বরিশাল

দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ইলিশ মৌসুম ফিরে এসেছে

ইলিশের হারানো মৌসুম ফিরে এসেছে। প্রায় দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া মৌসুম দুই-তিন বছর ধরে আশার সঞ্চার করে। তবে এবার শীত মৌসুমে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে  পূর্ণোদ্যমে হাজির হয় ইলিশের মৌসুম। মৎস্য কর্মকর্তাদের মতো সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে দেশে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, জাটকা নিধন ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। এ কারণে বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। ফলে ফিরে এসেছে দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া ইলিশ মৌসুম। ইলিশ নিয়ে গবেষণাকারী সরকারি একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের’ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান চলতি শীত মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে বলেন, বঙ্গোপসাগর এখন ইলিশে পরিপূর্ণ। সাগরে ইলিশ বেশি হয়ে যাওয়ায় সেগুলো নদীতে প্রবেশ করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। তার মতে, প্রতিবছর অক্টোবরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ মাস থেকে দুই মাস ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, ২০ মে থেকে টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধন বন্ধের উদ্যোগ অধিক কার্যকর হওয়ায় এবার শীত মৌসুমে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের আকার বড় হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়লেও ৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায়। ওই সময় (অক্টোবর মাস) ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মা-ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ে। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই পয়লা নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাটকা নিধনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। জাটকা মাঝারি আকারে পরিণত হওয়ার মধ্যেই অভয়াশ্রমগুলোতে পয়লা মার্চ থেকে দ্ইু মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। আবার ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এসব কারণে জাটকা ইলিশ একাধিকবার নদী থেকে সাগরে এবং সাগর থেকে নদীতে নিরাপদে আসা-যাওয়ার সুযোগ পায়। ইলিশ যত বেশি ছোটাছুটি করবে, আকারে তত বড় হবে।

ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক দ্বীন মোহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ড. আনিছের সব যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সাগরে ইলিশ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও ইলিশের গতিপ্রকৃতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। শীতে নদীতে ইলিশ বেশি পাওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে।

মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছরের জানুয়ারিতে বিভাগের ছয় জেলার স্থানীয় নদ-নদীতে মোট ১৯ হাজার ৫৯১ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া যায়। এর আগে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২০ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া যায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ১২ হাজার ২০ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৯ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ১৭ হাজার ৬৯২ টন ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল বিভাগে। সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর নদী-নদীতে। বরিশাল মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, নদ-নদীতে সারা বছর ইলিশ পাওয়া যায়। তবে ইলিশের প্রধান দুটি মৌসুম হচ্ছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। প্রায় দেড় যুগ আগে শীত মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেত। কিন্তু অতি আহরণের কারণে বিগত বছরগুলোতে তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে নদ-নদীতে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ফিরে এসেছে দেড় যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া মৌসুম।

সর্বশেষ খবর