মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

গণফোরামে আরেক দফা ভাঙনের সুর, বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদের দায়সারা অংশগ্রহণ, নামকাওয়াস্তে কর্মসূচি, লোকসমাগমও হয় না

মাহমুদ আজহার

ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রধান দল বিএনপির কাছে এ  ফ্রন্টের গুরুত্ব এখন আর আগের মতো নেই। মাঝেমধ্যে বৈঠকে দলের প্রতিনিধি পাঠানো হলেও সব নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটিতেই। ফ্রন্টে থাকা বিএনপি বাদে শরিক দলগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গণফোরাম থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বেরিয়ে যাওয়ার পর আবারও দলটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডিও ভেঙেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ জেএসডির নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন। নাগরিক ঐক্যে ভাঙন না হলেও সারা দেশে এখনো এ সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটেনি। তবে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে এই সংগঠনটিই ঐক্যফ্রন্টের হাল ধরে রেখেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি ‘একলা চলো’ নীতিতে চলছেন। একদিকে ঐক্যফ্রন্ট অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট- দুটোকেই এড়িয়ে চলছে বিএনপি। তবে মাঝেমধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নীতি-নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত হয় না। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও চান, দলটি এককভাবেই চলুক। এতে দিন শেষে বিএনপিই লাভবান হবে বলে মনে করেন তারা। আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থার জন্য ড. কামালকেও কেউ কেউ দোষারোপ করছেন। ফ্রন্টের কেউ কেউ বলছেন, ড. কামাল একদিকে তার বার্ধক্য, অন্যদিকে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। তাই তার নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট সামনে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পুরোপুরি পূরণ করতে পারবে না। তবে ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি যদি ঠিকমতো হাল ধরত তাহলে ঐক্যফ্রন্ট আরও গতিশীল হতো। কার্যকর বৈঠকও হতো। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, সেটা ঐক্যফ্রন্ট ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেইনি এমনকি ঠিকমতো প্রতিবাদও করতে পারেনি। এটা ঐক্যফ্রন্টের বড়  ব্যর্থতা। এখনো সারা দেশের মানুষ ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। এই স্বৈরাচারবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট রুখে দাঁড়ালে জনগণ পাশে দাঁড়াবে।  

বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি এখন নিজের দলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঠিকমতো গুছিয়ে বিএনপি একাই সরকারের ‘অনিয়ম’ ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য জনগণকে নিয়ে বিএনপিই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট সহযোগিতা করলে ভালো। নইলে বিএনপি একাই রাজপথে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতকে নিয়েও বিএনপির ভিতরে-বাইরে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপি এখন না পারছে তাদের ছাড়তে, না পারছে ধরে রাখতে। তবে বিএনপি এখন জামায়াতকে পাশ কাটিয়ে চলছে। এই নীতিতেই থাকবে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট আমাদের আন্দোলনের সহযাত্রী। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত মিটিং হচ্ছে। আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই।

জানা যায়, ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে এখন আর আগের মতো লোক সমাগম হয় না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মসূচিতে গেলেও ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। এমনকি দলের হাইকমান্ড একাধিকবার অনুরোধ করেও নেতা-কর্মীদের ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে পাঠাতে পারেনি। বিএনপির এক নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বার বার বঙ্গবন্ধুর নাম নিলেও আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির কথা বেমালুম ভুলে জান। এ কারণেই নেতা-কর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে যান না।

এদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর অনুগত কয়েক নেতা মিলে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও যুগ্ম সম্পাদক মুশতাক আহমদকে সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দিয়েছেন। গণফোরামের প্রবাসীবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাছিব চৌধুরীর নামে চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি। তবে দলটির একাধিক  কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সাময়িক বহিষ্কারের চিঠিটি প্রকাশ্যে আসে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে। মতিঝিলে ইডেন বিল্ডিংয়ের  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নোটিস বোর্ডে এই চিঠিটি টানিয়ে দেওয়া হয়। রেজা কিবরিয়া ও মুশতাক আহমদকে পাঠানো দুটি চিঠির কপি সংরক্ষিত আছে। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের প্রবাসীবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাছিব চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরের ২৬ এপ্রিল বিশেষ কাউন্সিলের পর স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, এমন কয়েকজনকে কো-অপ্ট করে দলে নেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এটা কেন করা হয়েছে, তা দেখিয়ে সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশতাক আহমদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি, প্রেসিডিয়াম বা সম্পাদক পরিষদের কোনো বৈঠক ডাকতে পারেননি রেজা কিবরিয়া। গত ২৮ জানুয়ারি সম্পাদক পরিষদের বৈঠকেই তাদের দুজনকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।’

সর্বশেষ খবর