মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি ঝিনাইদহ

বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ দুই ভাগ বিএনপি

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ। এ বিভক্তি তৃণমূল পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। বিভক্তি রোধে কেন্দ্র থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ঝিনাইদহের চারটি আসনে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী জয়লাভ করলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের ভাড়া করা কার্যালয়টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর আজ পর্যন্ত কার্যালয় নেওয়া হয়নি। নেতা-কর্মীরা দলীয় সভা-সমাবেশ কোথায় করবেন কেউ বলতে পারেন না। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে আবদুল হাই এমপির সঙ্গে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা বিশ্বাস বিল্ডার্সের মালিক নজরুল ইসলাম দুলালের রয়েছে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার। কিন্তু আবদুল হাই এমপির সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিকদার মোশারফ হোসেন সোনা জয়লাভ করেন। এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক ইমেজ থাকা এই এমপি দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে এখন গ্রহণযোগ্য। এলাকার উন্নয়নেও তার ভূমিকা প্রশংসনীয় হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে নির্বাচনের পর অনেকটা কোণঠাসা। ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু। হরিণাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অপুর আস্থাভাজন মশিউর জোয়ার্দ্দার। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনে সাইদুল করিম মিন্টু দল মনোনীত প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরের পক্ষে সমর্থন দিয়ে তাকে জয়লাভ করান। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক এমপি সফিকুল ইসলাম চরম ক্ষুব্ধ হন। ওই সময় মিন্টুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে তারা নালিশও করেন। তবে মিন্টু বসে নেই। নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে লবিং করছেন। অন্যদিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ নিয়ে রাজনীতি করেন ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দলের যুগ্মসাধারণ সাম্পাদক কনককান্তি দাস।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের মহেশপুরে দীর্ঘদিন পরে দলের পরীক্ষিত নেতা সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদকে সভাপতি করে পুরস্কৃত করা হয়েছে এবং তরুণ নেতা সুলতানুজ্জামান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এতে বর্তমান এমপি সফিকুল আজম খান চঞ্চল অনেকটা ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। কোটচাঁদপুর উপজেলায় সভাপতি শরিফুন্ন্ছো মিকি ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহানের মধ্যে তীব্র কোন্দল রয়েছে। ঝিনাইদহ-৪ (সদরের একাংশ-কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ও সাবেক এমপি আবদুল মান্নানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মসিউর রহমান। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার চাচাতো ভাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব এম এ মজিদ। গ্রুপিংয়ের কারণে পার্টি অফিসও দুটি রয়েছে। দলীয় কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করা হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা কোন গ্রুপে যাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এ কোন্দল আরও প্রকাশ্যে স্থান পায় উপজেলা কমিটি নিয়ে। এক যুগ পর হরিণাকুন্ডু উপজেলা ও পৌর, শৈলকুপা পৌর এবং কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে তিনটি উপজেলা ও পৌর শাখার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মসিউর গ্রুপের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিতভাবে জানালে কার্যক্রম স্থগিত করে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ঝিনাইদহে এসে তদন্ত করে গেছেন। বর্তমানে কমিটি নিয়ে প্রতিটি উপজেলায় বিএনপির দুটি-তিনটি করে গ্রুপ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর