মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত দেশে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

রংপুর থেকে চীন ফেরত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় স্থানান্তর । উহান থেকে আপাতত কাউকে না আনার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত দেশে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রী যাতায়াত অনেক বেশি। তাই সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত বাড়ায় দেশে ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি চীনফেরত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। চীনের উহানে থাকা বাংলাদেশিদের আপাতত দেশে আনা হবে না বলে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর কার্যালয়ে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সব দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর বেশ কাছের। কেবল তাই নয়, যেসব দেশে “লোকাল ট্রান্সমিশন” স্থানীয় সংক্রমণ রয়েছে তাদের সঙ্গেও আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সিঙ্গাপুরে প্রতিদিন আমাদের অনেক ফ্লাইট যায়। সেদিক থেকে আমাদের ঝুঁকি রয়েছে বলেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ঝুঁকি আছে তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।’ তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুরে একজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ৩৯ বছরের একজন পুরুষ বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে। দেড় বছর ধরে তিনি সেখানে কাজ করেন নির্মাণশ্রমিক হিসেবে। অন্য অসুস্থতার কারণে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পর পরীক্ষায় তার শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৭৬ জন। এ পর্যন্ত ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার এবং মারা গেছেন ৯১০ জন মানুষ। আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়, ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং হয়েছে মোট ২৬ হাজার ৫২২ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৫ হাজার ৭১ জনকে। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হচ্ছে ৫৫টি। এই ৫৫ রোগীর মধ্যে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বর্তমানে উহান থেকে আসা মোট ৩১২ জন আশকোনা হজ ক্যাম্প ও সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে ‘কোয়ারেনটাইনে’ আছেন জানিয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘তারা ১ ফেব্রুয়ারি এসেছেন। ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাখা হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা বাড়ি ফিরবেন বলে প্রাথমিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বা আলোচনা চলছে।’

আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া চীনফেরত শিক্ষার্থীকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রমেক হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা। সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র। হাসপাতালে ভর্তি আরেক শিক্ষার্থী শঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, রবিবার রাত পৌনে ১২টায় বমি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন চীনফেরত ওই শিক্ষার্থী। তাকে রাতেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আইইডিসিআর ও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে চীন থেকে দেশে ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট ও বমি শুরু হলে রাতে রমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এরপর মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেবেন্দ্রনাথ সরকারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের পর্যালোচনা শেষে ও ঢাকার আইইডিসিআরের সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

আশুগঞ্জে আড়াই শতাধিক চীনা নাগরিক ‘নজরদারিতে’ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে কর্মরত আড়াই শতাধিক চীনা নাগরিক ‘নজরদারিতে’ রয়েছেন। সম্প্রতি চীন গিয়েছেন এমন সাত নাগরিককে বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হয়েছে। তবে কারও শরীরেই করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানান, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানিতে ২৫৬ জন ও মিডল্যান্ড পাওয়ার স্টেশন কোম্পানিতে পাঁচজন চীনা নাগরিক কর্মরত আছেন। এ ছাড়া সাইলোতে কর্মরত আছেন পাঁচ ফিলিপিন্স নাগরিক। চীনা নাগরিকের মধ্যে সাতজন সম্প্রতি চীন থেকে আসায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। একজনকে ১৪ দিন পর্যন্ত বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়।

 তবে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। ওই নাগরিকদের নজরদারিতে একজন কনসালট্যান্টের নেতৃত্বে সেখানে মেডিকেল টিম কাজ করছে।

এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দরে মেডিকেল ডেস্ক বসার পর এ পর্যন্ত দুই সপ্তাহে মাত্র চারজন বাংলাদেশি নাগরিক পাওয়া গেছে যারা সাম্প্রতিক সময়ে চীন ভ্রমণ করে ভারতে যাওয়া-আসা করেন। তবে কারও শরীরেই করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় অংশে একজন মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম কাজ করছে। যদিও বাংলাদেশে মেডিকেল অফিসার নেই। বাংলাদেশের ডেস্কের স্বাস্থ্যকর্মী নাজমা আক্তার ও ফোরকান আহমেদ ভূঁইয়া জানান, তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন চীন ভ্রমণ বিষয়ে। যাতায়াতকারী প্রত্যেকেরই শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবিও এ বিষয়ে খেয়াল রাখছে। মিনি থারমাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়।’

সর্বশেষ খবর