মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ওপারের চায়ে মার খাচ্ছে এপার

সীমান্তে চলছে চোরাকারবারি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সীমান্তের ওপার থেকে দেদার পাচার হয়ে আসছে নিম্নমানের চা। ফলে এপারের দেশীয় চা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এতে হুমকিতে পড়েছে দেশীয় চা শিল্প। চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার চা নিলাম কেন্দ্রে প্রতিটি নিলামে চা-পাতার দাম কমে যাচ্ছে। উৎপাদনমূল্যের তুলনায় দাম কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে নিলামে ওঠানো দেশীয় চা অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা-পাতার এই চোরাকারবারি এমন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের নির্দেশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই চিঠিতে সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি, সীমান্তের বাজারগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং বর্ডারহাটে চা ব্যবসা নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। জানা গেছে, সীমান্তের ওপার থেকে যেসব নিম্নমানের চা-পাতা অবৈধভাবে ঢুকছে, সেগুলোর দাম খুবই কম। দেশীয় বাগান থেকে সংগৃহীত চা-পাতার প্রতিকেজি মূল্য যেখানে কমবেশি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সেখানে সীমান্ত পেরিয়ে ওপার থেকে অবৈধভাবে আসা চা পাতা বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে। ফলে চোরাকারবারির মাধ্যমে চা-পাতা পাচার হয়ে দেশে আসায় একদিকে সরকার  যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় চা-শিল্প। দাম কম হওয়ায় পাচারকৃত নিম্নমানের চা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। সূত্রগুলো জানায়, সীমান্তে চায়ের চোরাকারবারি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত মাসে দুই দফা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাইপথে বিপুল পরিমাণ চা আসায় দেশীয় চায়ের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চোরাই পথে নিম্নমানের চা-পাতা আসা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রংপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ, চুনারুঘাটসহ কয়েকটি সীমান্ত ছাড়াও ফেনীর ছাগলনাইয়া, খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়েও বিপুল পরিমাণ চা পাতা দেশে পাচার হয়ে আসছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক শওকত আলী ওয়ারেছী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিলেট সীমান্তের ওপারে প্রচুর চা-বাগান রয়েছে। তাদের জন্য দুর্গম পথে উৎপাদিত চা দার্জিলিং কিংবা দিল্লিতে নিয়ে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। ফলে ওসব বাগানের চা সীমান্ত পেরিয়ে সহজেই এপার চলে আসে। চা-পাতা বিক্রির বিষয়ে সীমান্তের এপার একটি স্মাগলিং সিন্ডিকেট এভাবেই তৈরি হয়েছে অভিযোগ করে টি কোম্পানির এই পরিচালক বলেন, তারাই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওপারের চা পৌঁছে দিচ্ছেন। চোরাকারবারের ফলে দেশীয় চা-পাতার চাহিদা এত বেশি কমেছে যে গত নিলামে প্রতি কেজি চায়ের দাম উঠেছে মাত্র ১০৩ টাকায়। এতে দেশীয় চা বাগানের উৎপাদন খরচ উঠছে না। জরুরিভিত্তিতে চোরাকারবারি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের চা বাগানগুলো লোকসানের মুখে পড়বে। ফলে এই খাতে কর্মরত লাখ লাখ চা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন সরকারি চা কোম্পানির ওই পরিচালক।

সর্বশেষ খবর