বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের দখলে মাঠ মামলা-হামলার ভয়ে বিএনপি

জেলার রাজনীতি - নোয়াখালী

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নোয়াখালীর রাজনীতির মাঠ আওয়ামী লীগের একক দখলে। অন্যদিকে মামলা, হামলা ও পুলিশের ভয়ে মাঠে নামতে পারছে না বিএনপি, এমন অভিযোগ নেতা-কর্মীদের। ঘরোয়া পরিবেশে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব চত্বরে দু-একটি সভা-সমাবেশ হলেও রাজপথে নেই তাদের কর্মকান্ড। সাবেক স্পিকার মরহুম আবদুল মালেক উকিলের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠ বিএনপির দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মাঠ দখলে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। এদিকে কিছু সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বিভিন্ন দফতরে টেন্ডার ভাগাভাগিসহ নানা সুবিধা পেলেও দলের অনেক ত্যাগী    নেতা-কর্মী উপেক্ষিত হচ্ছেন। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের শত শত নেতা-কর্মী সরকারি দলে যোগ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে চলছেন, তারাও বিভিন্নভাবে সুবিধা নিচ্ছেন। নোয়াখালী জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। একসময়ে এখানে বিএনপির প্রভাব থাকলেও বর্তমানে চিত্র ভিন্ন। নোয়াখালীর ৬টি আসনই এখন আওয়ামী লীগের দখলে। অন্যদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি বেশ শক্তিশালী। মামলা-হামলা ও পুলিশের ভয়ে আন্দোলনে মাঠে নামতে পারে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আদালতের বারান্দা ও নেতা-কর্মীদের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও তেমন দেখা যায় না। সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির প্রার্থীরাও এলাকায় তেমন আসেন না। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য জোরালো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূল পর্যায়েও বিএনপি নেতা-কর্মীরা হতাশ। এজন্য অনেক নেতা-কর্মী সরকারি দলে যোগ দিয়ে নিজেদের রক্ষা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান জাবেদ জানান, একরামুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ আজ সুসংগঠিত, তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক জানান, একরামুল করিম চৌধুরী সদর ও সুবর্ণচরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, যা বিগত ৫০ বছরেও হয়নি। তাই আওয়ামী লীগ আজ সুসংগঠিত। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা সব সময় রাজপথে আছি এবং থাকব।

বিএনপি নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জরিত : নোয়াখালীতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত।  জেলা বিএনপির দলীয় অফিস না থাকায় ও পুলিশের ভয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন ঘরোয়াভাবে পালিত হয়। বেশির ভাগ কর্মসূচি আইনজীবী সমিতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহানের বাসায় পালিত হয়। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি নেই। কিছু কিছু উপজেলায় আবার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় বিএনপির জোরালো আন্দোলন না থাকার ফলে জেলার তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তি একই পদে বহাল থাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী মামলার বেড়াজালে আটকা পড়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। প্রতিনিয়তই হাজিরা দিচ্ছেন আদালতে। দলের সক্রিয় বেশির ভাগ নেতা-কর্মী মামলার আসামি। ফলে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলেও পুলিশের ভয়ে পালিত হচ্ছে ঘরোয়া পরিবেশে সীমিত আকারে। জাতীয় পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশ ও মামলার ভয়ে তেমন একটা দেখা যায় না। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দলীয় কার্যক্রমে বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। এদিকে জেলা বিএনপি ও উপজেলার দুই-তিনজন শীর্ষ নেতা সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে গড়ে তুলছেন ধন-সম্পদ। এ নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন টেন্ডারেও অংশ নিচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। তবে রাজপথে বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন অফিসে ট্রেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যে। জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিএনপি শক্তিশালী দল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জেলা ৬টি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী অসংখ্য মামলা হামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জর্জরিত। প্রতি সপ্তাহে তাদের আদালতের বারান্দায় হাজিরা দেওয়ার জন্য আসতে হয়।

জাতীয় পার্টির তৎপরতা, মহাজোটের সঙ্গে দূরত্ব, জামায়াত অন্তরালে : অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও নোয়াখালী জেলা শহরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেলা জাতীয় পার্টির রাজনীতি। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। মহাজোটের কারণে সাংগঠনিকভাবে একটু দুর্বল রয়েছে। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হলেও সাংগঠনিকভাবে মহাজোট আমাদের মূল্যায়ন করে না, আমরা রাজনৈতিকভাবে মহাজোট থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হলেও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে, প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের তেমন কোনো কর্মকা- না দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে চলছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। মামলায় জর্জরিত হয়ে আত্মগোপনে থাকায় সক্রিয় নেই কার্যক্রম। তবে গোপনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সর্বশেষ খবর