বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস

বন্দরজুড়ে কঠোর সতর্কতা

চীন থেকে ফিরতে হবে নিজ দায়িত্বে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ♦ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া অনুমতি মিলছে না নাবিকদের ♦ আক্রান্ত ৪৩ হাজার, মৃত ১ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

বন্দরজুড়ে কঠোর সতর্কতা

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্র্রবন্দরে নেওয়া হয়েছে কঠোর সতর্কতা। বিমানবন্দরে

এয়ারলাইনসের যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের (স্বাস্থ্য পরীক্ষা) আওতায় আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া জেটিতে ঢোকার অনুমতি মিলছে না নাবিকদের। তবে এখনো ঢিলেঢালাভাবে চলছে স্থলবন্দরের স্ক্রিনিংব্যবস্থা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)  পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলছি। এর পরই নৌবন্দরে। কারণ ঘণ্টায় কয়েক শ যাত্রী যাতায়াত করছেন একটি বিমানবন্দর থেকে। এক দিনের মধ্যে চলে আসছেন তারা। তাই কেউ যদি ভাইরাস আক্রান্ত হন তাকে শনাক্ত না করতে পারলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্রবন্দরে নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে একটা সুবিধা হলো জাহাজে যাত্রী থাকে না এবং তারা রওনা হওয়ার বেশ কয়েকদিন পরে এখানে আসে। এর মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেলেও পেতে পারে। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ বাড়ায় এসব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারতে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত না হওয়ায় স্থলবন্দরে ঝুঁকি তুলনামূলক কম রয়েছে।’ আইইডিসিআর-সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীর সংখ্যা ১৪ হাজার ২৯৪। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ১৫২ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা ১১ ও আশকোনা কোয়ারেনটাইন (পর্যবেক্ষণ) কেন্দ্রে উহানফেরত ৩০১ জন সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া কোনো নাবিকের প্রবেশে অনুমতি মিলছে না : করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কঠোর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত যতগুলো জাহাজ চীনের বিভিন্ন বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, সেসব জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া জেটিতে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। একইভাবে চীন থেকে যেসব পণ্য আনা হচ্ছে সেসবও পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করার পর সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ জানুয়ারির পর থেকে চীন ছেড়ে আসা জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। বন্দর সচিব জানান, চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের ঘটনা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার পরপরই বন্দর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় আসার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন ঘোষণা দেবেন তার জাহাজে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো নাবিক আছে কি নেই। তা যাচাই করার পর বন্দরে জাহাজ ঢোকার অনুমতি মিলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্দরের বহির্নোঙরে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টিম নিয়ে গিয়ে চীন থেকে আসা জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন জানান, চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে একটি জাহাজের ১৩ থেকে ১৫ দিন লাগে। সর্বশেষ চীন থেকে আসা জাহাজ এমভি কালামাতা ট্রেডার চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত সোমবার। তবে সে ধরনের কোনো লক্ষণ ওই জাহাজের নাবিক, ক্রুদের মাঝে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরসূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে চীন থেকে গড়ে ১৪-১৫টি কনটেইনার জাহাজ ও ৪-৫টি জেনারেল কার্গো জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। সাধারণত চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে একটি জাহাজের লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন। তবে বর্তমানে চীন থেকে জাহাজ আসা কমে গেছে। গত ১০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে চীনের বিভিন্ন বন্দর ছেড়েছে মাত্র ১০টি জাহাজ।

চীন থেকে ফিরতে হবে নিজ দায়িত্বে : চীন থেকে বাংলাদেশি কাউকে এ মুহূর্তে সরকারিভাবে দেশে ফেরানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত খরচে কেউ ফিরলে পরবর্তী ব্যবস্থা সরকার নেবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের টাকা খরচ করে ওদের আনব কিনা। আমরা খুব সংবেদনশীল, তাদের বাবা-মা অনেকে বলছেন তাদের নিয়ে আসার জন্য। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা যদি নিয়ে আসেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা এলে আসতে পারে। আগে আমরা যাদের এনেছি, ৩ কোটি টাকা আমাদের প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে। আমাদের ফান্ডে আর কোনো পয়সা নেই। সরকার দেবে অবশ্যই। তারা আসতে পারে চাইলে।’ যেসব অভিভাবক যোগাযোগ করেছেন, তাদের সন্তানদের নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরানোর কথা বলা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো ফ্লাইট বন্ধ করিনি। বিশেষ করে কুনিমং ও গুয়াংজু থেকে চীনের ফ্লাইট আসছে।’

চীনে আটকে থাকা বাকিদের ফেরানোর ক্ষেত্রে টাকাই একমাত্র সংকট কিনাÑ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা জরুরি না। এরা যদি হজ ক্যাম্প থেকে বের না হয়, বাকিদের কোথায় রাখব? আমরা বলেছি, তোমরা যদি আসতে চাও, অবশ্যই আমরা চেক করে, কোয়ারেনটাইনে পৌঁছিয়ে দেব।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আক্রান্ত ও মৃত বাড়ছে : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৮ জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর