শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি গাইবান্ধা

ত্রিমুখী গ্রুপিং আওয়ামী লীগে কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক বিএনপি

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১২ মার্চ। আবার কাউন্সিল কবে হবে তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মনে সংশয় আছে। পুরনো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পদ ধরে রাখার অভিযোগ আছে নতুনদের। যে কারণে গ্রুপিং সমস্যাও দানা বেঁধেছে দলটিতে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপি মামলা ও পুলিশের ভয়ে সতর্ক ও রক্ষণাত্মক কর্মসূচি দিয়ে ঢিমেতালে চলছে। যদিও আগের তুলনায় গ্রুপিং সমস্যা  কমেছে দলটির। কিন্তু জেলা-উপজেলা জুড়েই সংকুচিত হয়ে আছে বিএনপি। গত ৪ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করেও কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়। হিসাব মতে আগামী মার্চ মাসেই জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়। কিন্তু আগামী কাউন্সিল কবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। আবার কাউন্সিল যথাসময়ে হবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন অনেক নেতা-কর্মী। জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগে গ্রুপিং সমস্যা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। গাইবান্ধা সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির এবং দলের সভাপতি সৈয়দ শামস উল আলম হিরু ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে তিনটি গ্রুপ সক্রিয়। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে ঘিরে দুটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ, সাদুল্যাপুর উপজেলায় প্রয়াত এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকারের অনুসারী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান বিপ্লবকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ সক্রিয়। পলাশবাড়ী উপজেলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীকুল ইসলামকে ঘিরে দুটি গ্রুপ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এবং এমপি গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর দলটি এখানে নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে।

কয়েকজন নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ-শামস-উল আলম হীরু ও সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বয়সে প্রবীণ। কেন্দ্রে পরিচিতি ও অবস্থানের কারণে নতুন নেতৃত্বকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ পদ ছাড়তে নারাজ। যে কারণে দল ঝিমিয়ে পড়েছে। এমনকি মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি এখনো গ্রহণ বা এ উপলক্ষে কোনো সভা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিল হলে সভাপতি পদের জন্য প্রতিযোগিতা করবেন দলের বর্তমান সহসভাপতি ফরহাদ আবদুল্লাহ হারুন বাবলু আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্ডল, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবীর, গাইবান্ধা পৌর মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুরজ্জামান রিংকুর প্রার্থী হওয়ার কথা দলের নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা গেছে। গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছিল গাইবান্ধা বিএনপি। গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি আবদুর রশীদ সরকারকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে রশীদ সরকার আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান। এরপর বিভেদ ঝেড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। তবে সাংগঠনিকভাবে এখনো দলটি গুছিয়ে উঠতে পারেনি। শ্রমিক দল ও কৃষক দল ছাড়া অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত কমিটি নেই। ফলে অধিকাংশ উপজেলাতেই দলীয় কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে আছে। কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি জেলা বিএনপি পালন করতে চাইলেও পুলিশি বাধায় দলীয় কার্যালয় ও এর সম্মুখেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় বলে নেতারা জানান। নতুন করে মামলায় যেন কর্মীরা নাজেহাল না হন সেজন্য সতর্কভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। কেন্দ্র ঝুঁকি না নিলে এখানেও তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। তবে ইতিপূর্বে জেলায় দলে যে গ্রুপিং সমস্যা ছিল তার তীব্রতা কমে এসেছে। এখন সবাই কমবেশি কর্মসূচিতে পাশাপাশি দাঁড়াচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর