শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বাঙালি হিসেবেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালি হিসেবেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক ২০২০ প্রদান করেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, এ অগ্রযাত্রা যেন অপ্রতিরোধ্যভাবে অব্যাহত থাকে। আমরা বাঙালি, বাঙালি হিসেবেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলব। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, একসময় তাঁর নাম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস ইতিহাসই, তা কেউ মুছে ফেলতে পারে না। গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, শিক্ষা, ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক-২০২০ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের কোথাও গিয়ে যেন বাংলাদেশ শুনলে আর আমাদের কেউ অবহেলা করতে না পারে, সেভাবেই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। কাজেই এ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া এবং বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, তা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত এক দশকে বাংলাদেশ যেভাবে দ্রুত এগিয়েছে, এ অগ্রযাত্রা যেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে অব্যাহত থাকে, সেটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, সেজন্য কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও নিয়ে রেখেছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তারাও যেন এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে, নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে পারে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরবচ্ছিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ভাষা আন্দোলন শুরু করেন, তখন থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী তাঁর ওপর নজরদারি ও তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লিখতে শুরু করে। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বক্তৃতা করেন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

পদক পেলেন যাঁরা : এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর)। তাঁর পক্ষে ছেলে সাবিরুল ইসলাম পদক গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হাজী আক্তার সরদার (মরণোত্তর)। তাঁর পক্ষে পদক গ্রহণ করেন ছেলে মোক্তার সরকার। আবদুল জব্বার (মরণোত্তর)। তাঁর পক্ষে ছেলে আবু জাফর রাজু পদক গ্রহণ করেন। ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর)। তাঁর পক্ষে মেয়ে ফেরদৌসি ইসলাম পদক গ্রহণ করেন। ভাষা ও সাহিত্যে সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর)। তাঁর পক্ষে ছেলে সালমান তারিক পদক গ্রহণ করেন। পদকপ্রাপ্ত অন্যরা সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করেন। শিল্পকলা সংগীতে বেগম ডালিয়া নওশীন, শঙ্কর রায়, বেগম মিতা হক; নৃত্যে মো. গোলাম মোস্তফা খান; অভিনয়ে এস এম মহসীন; চারুকলায় অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান; সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ; গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারি আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ্; শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া; অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম; সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ড. নুরুন নবী, বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি; চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. সায়েরা আখতার। এ ছাড়া বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক দেওয়া হয়। মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে পদক গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর