শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি – রাজবাড়ী

দুই দলেই তীব্র কোন্দল

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

রাজবাড়ী জেলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএপিতে চলছে তীব্র কোন্দল। চলছে ল্যাং মারার প্রতিযোগিতা। রাজবাড়ী-১ আসনে সরকারদলীয় এমপি কাজী কেরামত আলী ও তার ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর মধ্যে চলছে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব। তাদের দ্বন্দ্বের প্রভাবে জেলা আওয়ামী লীগে চলছে বিভক্তি। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলীকে আহ্বায়ক      এবং প্রিন্সিপাল মঞ্জুরুল আলম দুলালকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও কর্তৃত্ব নেই তাদের হাতে। ফলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির রাজনীতি। অন্যদিকে জেলা জাতীয় পার্টি ও জাসদের রাজনীতি চলছে ঝিমিয়ে। অস্তিত্ব সংকটে জামায়াতে ইসলামী।

সূত্রমতে, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। জেলার দুটি আসনেই গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জিতেছেন। রাজবাড়ী-১ (উপজেলা সদর ও গোয়ালন্দ) এবং রাজবাড়ী-২ (পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি) আসনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এমপি কাজী কেরামত আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। এর মধ্যে জিল্লুল হাকিম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি । আরেক এমপি কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে প্রকাশ্যে চরম কোন্দল রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর। তারা আপন ভাই। বিপক্ষকে ঠেকানোর মিশনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জেলা-উপজেলার রাজনীতিও। বিশেষ করে পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ চলছে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে। একাংশের নেতৃত্বে এমপি কাজী কেরামত আলী। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইরাদত আলী। মূলত সংসদ নির্বাচনে ‘এমপি’ ও কর্তৃত্ব নিয়েই এই বিরোধ। তবে জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে।

জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে ইন্ধন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জিল্লুল হাকিম বলেন, বিষয়টি মিথ্যা। আমি কেন তাকে ইন্ধন দেব! তারা দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা। এটা তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক। তারপরও যাতে তাদের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব দলের ওপর না পড়ে সেজন্য কাজ করছি। খুব দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে। আসন্ন জেলা কাউন্সিলের আগেই ঝামেলাটা মিটিয়ে যাবে বলে আশা করছি। এদিকে জেলার রাজনীতি বিভক্তির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য নেতারাও। তারা বলছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দলের নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এটা চলতে দেওয়া যায় না।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এস এম নওয়াব আলী বলেন, দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব তৃণমূল নেতাদের মধ্যে তৈরি করেছে চরম হতাশা। দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি জেলা আওয়ামী লীগের দুই ভাইয়ের কোন্দল মেটানো না যায় তবে আগামী সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী বলেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে রাজবাড়ী জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কমিটি ভোটের মাধ্যমে করা হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থেকে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া দেখছেন। তিনি আরও বলেন দলের মধ্যে যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল সেখান থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগ শুদ্ধ হয়েছে। অনেক  সম্মেলনে শিক্ষিত নারী নেত্রীত্ব উঠে এসেছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে অনেক নেতা-কর্মী দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা চাঁদাবাজি করতেন তাদের দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। রাজবাড়ীর গুটিকয় নেতা-কর্মী আমার ভাইকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ভুল পথে পরিচালিত করছেন। তিনি আরও বলেন ভাই আমাকে যে নির্দেশনা প্রদান করেন আমি সেগুলো সব সময় পালন করেছি। তিনি দাবি করেন রাজবাড়ীর তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় ৮০ শতাংশ নেতা-কর্মী তার সঙ্গে রয়েছেন। যে বিভাজন রয়েছে তা আগামী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে দূর হবে।

বিএনপি : পুরনো কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক কর্মকা- স্থবির বিএনপির। জেলার দুই সাবেক শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্বের কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফল ঘরে তুলতে পারেনি। স্থবির সংগঠনকে চাঙ্গা করতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলীকে আহ্বায়ক এবং প্রিন্সিপাল মঞ্জুরুল আলম দুলালকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রাজবাড়ী জেলা বিএনপি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। কারণ নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরও নাটাই নেই তাদের হাতে। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলা বিএনপির নাটাই এখন সাবেক সভাপতি ও  সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. নাসিরুল হক সাবুর হাতে। এখন চলছে একে অন্যকে ল্যাং মারার প্রতিযোগিতা। জেলার নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়ায় কোন্দল নিরসনে উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। গত ১৭ জানুয়ারি রাজবাড়ীর আজাদী ময়দানের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের হলরুমে প্রথম সভা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মাসুক উর রহমানের উপস্থিতিতে এই বৈঠক হয়। সভায় কোন্দল মিটিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের গতি বেগবান করার তাগিদ দেন কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতারা।

ঘুরে দাঁড়াতে পারে বিএনপি?- রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু টেলিফোনে জানান, জেলা বিএনপির এখন যে অবস্থা তাতে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। দেখা যাক কী হয়। তবে আপাতত দলের স্বার্থেই আমরা সবাই এখন এক হয়ে কাজ করতে চাই। কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ২ নেতা এসে ১৫ দিনের মধ্যে ৫টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভাসহ সব ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন না করায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী জানান, জেলা সংগঠনে দীর্ঘদিন কোন্দল ছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন সেই দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। গত বছরের ২৫ নভেম্বর নতুন করে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তার বিশ্বাস, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে জেলা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় পার্টির সাবেক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে খোন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চুকে সভাপতি এবং মো. মোকছেদুর রহমান খান মোমিনকে সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত রেখে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে কমিটি করে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টি। এ বছরের ১৩ জানুয়ারি আহম্মেদ নিজাম মন্টুকে সভাপতি এবং আ. লতিফ লালকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের রাজবাড়ী জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে স্বল্প পরিসরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে এসব দল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর