শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অননুমোদিত বিভাগে ভর্তি হয়ে বিপাকে চার শতাধিক শিক্ষার্থী

আকতারুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ খোলার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে ইতিহাস বিভাগ। ২০১৭-১৮ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে এ বিভাগে। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে মোট ৪১৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায়, অননুমোদিত ইতিহাস বিভাগে নতুন করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হবে না। এতে বিপাকে পড়েছে বিভাগের চার শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। ইউজিসি থেকে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ, মিছিল, সভা-সমাবেশ, কালো কাপড় চোখে বেঁধে কর্মসূচি, অনশন পালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। আন্দোলনকারীরা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় টানা পনেরো দিন সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, তিন বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হলেও এ বিভাগের নিজস্ব কোনো শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিভাগের অনুমোদন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়োগ দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিস’ ইনস্টিটিউটের অধীন সাত শিক্ষকের মাধ্যমেই জোরাতালি দিয়ে চলছে এ বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম।

তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কারিমুল হক গতকাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভর্তি হয়েছি। বিভাগ অনুমোদন না থাকার দায় তো আমরা নিতে পারি না। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুন ফেরদৌস মিতু বলেন, বিভাগ অনুমোদন না দেওয়া হলে পাস করার পরও নানা বিপত্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছি। আমরা চাই, ইতিহাস বিভাগকে অনুমোদন দেওয়া হোক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, বিভাগ অনুমোদন দেবে ইউজিসি। ইউজিসিকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি করেছে। শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, যেহেতু ইউজিসি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তাই আন্দোলন বাদ দিয়ে এখন ক্লাসে ফেরা উচিত, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটে না পড়ে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, অনুমোদন ছাড়া বিভাগ খুলে সাবেক উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন অপরাধ করেছেন। তার অপরাধের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। সাবেক উপাচার্যের উচিত ছিল অনুমোদন নিয়ে বিভাগ খোলা। তিনি বলেন, ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হবে কি না। তথ্যমতে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইউজিসির গঠিত সাত সদস্যের কমিটিতে প্রধান হিসেবে রয়েছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম। কমিটিতে সদস্য রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেনকে কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর