রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে মাছ চাষে দিতে হবে হালাল খাবার

সৌদিতে রপ্তানির সুযোগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর সৌদি আরবে আবারও মিঠা পানির দেশি জাতের মাছ (একুয়াটিক ফিশ) রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এজন্য দেশীয় মৎস্য চাষে হালাল ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সৌদি আরব সম্প্রতি সরকারকে জানিয়েছে, তাদের একটি প্রতিনিধি দল মৎস্য চাষ পদ্ধতি সরেজমিন পরিদর্শন করতে বাংলাদেশ সফর করবে। আর এতেই আশার আলো দেখছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। তারা মনে করছে, পরিদর্শন টিমকে যদি বোঝানো যায় যে, দেশে এখন মৎস্য চাষে নিরাপদ ও হালাল খাদ্য ব্যবহৃত হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে পারে। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে মাছ নেওয়া বন্ধ রেখেছে সোদি আরব। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল একটি সভা করেছে। ওই সভায় রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সৌদি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।  বৈঠকের সূত্রগুলো জানায়, সৌদি আরবের উদ্বেগ মূলত মাছের খাদ্য নিয়ে। কারণ বিদেশ থেকে যেসব ফিশফিড আমদানি করা হয়, সেগুলোতে শূকরের হাড় থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেক মৎস্যচাষি মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ও আবর্জনাও ব্যবহার করে থাকেন, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে সরকারের আইন রয়েছে। পাশাপাশি মাছের খাদ্য হিসেবে যা আমদানি করা হয়, তার মান ও গুণগত বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই বছর আগে সৌদি আরব বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাছ আমদানিতে কিছু শর্তারোপ করে। এর একটি ছিল, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মাছ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কারণ যেসব কোম্পানি মাছ রপ্তানি করছে এবং তারা যেখান থেকে মাছ সংগ্রহ করছে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে হচ্ছে কি-না, মাছকে হালাল খাদ্য দেওয়া হচ্ছে কি-না এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় দেশটি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে না থাকার কারণে ২০১৮ সাল থেকে মাছ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত দেশটিতে মিঠা পানির মাছ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জানতে চাইলে ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সৌদি আরবের শর্ত অনুযায়ী যেসব দেশ মৎস্য রপ্তানি করে, তাদের দেশের মাছ চাষ, সংগ্রহ ও সরবরাহ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)’র ওয়েবসাইটে হেলথ সেইফটি বিষয়ে তথ্য আপডেট রাখতে হয়। বাংলাদেশের ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই তথ্য আপডেট ছিল। এখন আমরা ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করেছি। এ ছাড়া দেশটির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসতে চাইছে। তারা যেন দ্রুত সফরে আসে সে বিষয়েও কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে চিংড়ি। তবে রুই, কাতলা, শিং,  কৈ, বোয়াল, মলা, কাচকি, বাতাসি, আইড়, পাবদা, টাকিসহ দেশি জাতের মিঠা পানির মাছও রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। যদিও আগের তুলনায় এ খাত  থেকে রপ্তানি আয় কমছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা আয় করেছে। আগের অর্থবছরে আয় ছিল ৪ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে আবার মাছ রপ্তানি শুরু হলে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। দেশে ১৪ লাখ নারীসহ প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর