শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বরগুনার খাকদোন এখন সরু খাল

ন দী র কা ন্না

মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা

বরগুনার খাকদোন এখন সরু খাল

অবৈধ দখল আর বর্জ্যরে কারণে সরু খালে পরিণত হয়েছে খাকদোন নদী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরগুনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একসময়ের খরস্রোতা খাকদোন নদ অবৈধ দখল আর বর্জ্যরে কারণে সরু খালে পরিণত হয়েছে। বরগুনা থেকে পটুয়াখালী নৌপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই খাকদোন নদ। খাকদোন ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ঢাকা-বরগুনা রুটের দ্বিতল লঞ্চ জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে চলাচল করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার পর সত্তরের দশকের শেষ দিকেও খাকদোন নদ দিয়ে লঞ্চ-স্টিমারসহ পণ্যবাহী বড় বড় নৌযান চলাচল করত।

আশির দশকের শুরুতে প্রবহমান খরস্রোতা খাকদোন নদীর দুই পাড় দখল শুরু হয়। দক্ষিণ পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ঘিরে শহরের স্থাপনা গড়ে ওঠে। বেড়িবাঁধের বাইরে ভূমি অফিস থেকে এক সনা বন্দোবস্তের পাশাপাশি শুরু হয় অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণ। একইভাবে              উত্তর পাড়ে জেগে ওঠা চরে গড়ে তোলা হয় অবৈধ স্থাপনা। খাকদোন নদীর পূর্ব দিকে নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে আজ সবটুকুই অবৈধ দখলে। খাকদোন নদী দিয়ে পূর্ব দিকে বুড়িশ^র নদী হয়ে নৌপথে পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যমটি আজ অতীত ইতিহাস। শুধু খাকদোন নদীই নয়, এর সংযোগ বরগুনার ভাড়ানি খাল, যেখান থেকে নৌপথে তালতলী উপজেলার সঙ্গে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করত, সেই ভাড়ানি খালও আজ অবৈধ দখলদারদের বসতবাড়ি। ভূমি অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার বিনিময়ে অবৈধ দখলদারদের বিভিন্ন সময় বন্দোবস্ত দিয়েছেন। তারা স্বনামে-বেনামে নিজেরাও এসব জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘খাকদোন নদীসহ প্রবহমান যেসব খাল অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করা হবে। খাকদোন নদী আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক বলেন, নদী রক্ষা কমিশন ইতিমধ্যে নদীর সীমানা নির্ধারণে কমিটি করে দিয়েছে। সীমানা নির্ধারণের পর খাকদোন নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলবে। বরগুনা শহরের নদী ও খাল রক্ষার দাবিতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। খাকদোন নদী আর ভাড়ানি খাল অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে নাগরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে মাঝপথে থেমে যায়। একটি চক্র দুই পাড়ের অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় প্রশাসন অভিযান থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। খাকদোন নদী অবৈধ দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সাধারণ নাগরিকরা। নৌঘাট দখল করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কর্মচারীরা। ভাড়ানি খালের দুই পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও খাকদোন নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ প্রশাসন না নেওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বরগুনা জেলায় খাকদোন, বুড়িশ^র, বিষখালী, বলেশ^র নদী থেকে প্রবহমান উপ ও শাখা খালের সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব খালের প্রবহমান পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্লুইস গেট ও কালভার্ট নির্মাণ করায় খালগুলোর দুই পাড় ভরাট হয়ে আছে। এসব খালের দুই পাড়েও অবৈধ দখলদাররা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন অবকাঠামো। কেউ কেউ খালে জাল ফেলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবাদীদের দাবি, অবিলম্বে খাকদোন নদীর দুই পাড় থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। এ ছাড়া এ নদী থেকে বের হওয়া উপ-শাখা ও শাখা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে পানি চলাচলের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর