শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপির সম্পদ বিক্রি করতে পারবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন

আইনের খসড়া প্রকাশ

মানিক মুনতাসির

খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন নামে একটি নতুন স্বাধীন সংস্থা করছে সরকার। সংস্থাটি পরিচালনায় নতুন আইনও করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সংস্থাটি প্রয়োজন মনে করলে ঋণখেলাপির সম্পদ বিক্রি কিংবা লিজ দিতে পারবে। ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন, ২০২০’ নামের নতুন এ আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রকাশিত খসড়া আইনের অধীনে যেসব খেলাপি ঋণ আদায় করতে ব্যাংক ব্যর্থ সেগুলো আদায়ে সরকার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনকে সর্বময় ক্ষমতা দেবে। সরকারি বিশেষায়িত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্ভাব্য সব ধরনের ক্ষমতা পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজন মনে করলে ঋণখেলাপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে পারবে। লিজ দিতে পারবে। ঋণখেলাপির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল, পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন, ঋণ পুনর্গঠন করতে পারবে। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর এই প্রথম কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে এত ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, নন-পারফর্মিং ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ আইন প্রাধান্য পাবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনে আদায় বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন, ২০২০’ নামে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করেছে। এখন সর্বসাধারণের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর পরই তা চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনটি পাস করে তা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নন-পারফর্মিং ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হওয়ার প্রবণতা কমানো, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও উৎসাহ প্রদান এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে সহায়তা ও পরামর্শ দিতেই এ আইন করা হচ্ছে। আইনটিতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে করপোরেশনকে শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার বা মিউচুয়াল ফান্ড কিনে বিনিয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তহবিল সংগ্রহে সেখান থেকে টাকাও তুলতে পারবে করপোরেশন।

খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন প্রতিটি ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক চুক্তি করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংক যে খেলাপি ঋণগুলো আদায়ে ব্যর্থ হয় সেগুলো করপোরেশনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করবে। তারপর করপোরেশন সে খেলাপি ঋণ আদায়ে সোচ্চার হবে। আইনের ধারা ২৩-এ করপোরেশনের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণসহ কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিক্রয় বা লিজ দিতে পারবে। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি চাইলে ঋণগ্রহীতার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলিকরণ কিংবা পুনর্গঠন করতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে করপোরেশনের এক বা একাধিক এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি ঋণখেলাপি হন তাহলে এজেন্ট প্রশাসকের ক্ষমতা পাবে। ঋণগ্রহীতার বকেয়া নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে করপোরেশনকে। এ ছাড়া জামানতের দখল, সুরক্ষা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লিজ বা বিক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। ঋণগ্রহীতার ঋণের সম্পূর্ণ বা যে কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবে। করপোরেশন নিজ নামে মামলা করতে পারবে। শুধু দেশের নয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ঋণখেলাপি হলে সে ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা এবং মামলা করতে পারবে করপোরেশন। খসড়া আইনে বলা হয়, করপোরেশন পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে পারবে। করপোরেশনের অনুমোদিত শেয়ার মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০০ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হবে। সরকার সময় সময় অনুমোদিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করবে। তহবিল সংগ্রহে করপোরেশন প্রয়োজনে পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যু করতে পারবে। করপোরেশনের চেয়ারম্যান হবেন পদাধিকারবলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। এর পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পলিসি তো পরস্পরবিরোধী। একদিকে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে এ উদ্যোগ নিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করছে। তবে আমার শঙ্কা হলো, এ আইন পাস হলে নিঃসন্দেহে আদালতে রিট হবে এবং আইনটি স্থগিত হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে সার্বিকভাবে খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সরকার এর মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছে এটি ভালো। তবে এর আগে রাজনৈতিক কারণে ঋণ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’ পাশাপাশি আইন পাসের আগে অন্যান্য দেশে এ ধরনের আইনে কী বলা হয়েছে তা দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর