শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দ্বিগুণ বাজেট বহুগুণ মশা

৯২ কোটি টাকা খরচ মশা ঠেকাতে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দ্বিগুণ বাজেট বহুগুণ মশা

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরজীবন। গত বছর এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বরে ভুগেছে রাজধানীসহ সারা দেশে অসংখ্য মানুষ। এখন কিউলেক্স মশার কামড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত রাজধানীবাসীর। মশা ঠেকাতে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বাজেট বরাদ্দ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বহুগুণ ঘনত্বে জন্মানো মশা।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্যনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি মশক নিধনে জোর দেব। আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ মশক নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রত্যেক এলাকার জনগণের তত্ত্বাবধানে মশক নিধন কর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন করার চিন্তা আছে। আমার পরিকল্পনা আছেÑ বিভিন্ন সোসাইটি, মসজিদের ইমাম কিংবা পাড়া কমিটির তত্ত্বাবধানে মশক নিধন কর্মীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার। তাহলে মশক নিধন কর্মী ওষুধ ছিটালেন কিনা সে বিষয়ে তারা খোঁজ রাখতে পারবেন।’

জানা যায়, রাজধানীতে মশক নিধনের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে দুই সিটি মিলিয়ে মশক নিধনে বরাদ্দ দিয়েছে ৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বরাদ্দ দিয়েছে ৪৯ কোটি  ৩০ লাখ আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বরাদ্দ করেছে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ খাতে গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ আর উত্তর সিটিতে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণে মশা নিধনে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সামান্য কমে দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, উত্তর সিটিতে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ হয় ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, উত্তর সিটিতে ২০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন করেছে ২১ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে ডিএনসিসি ১৮২ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়েছে। বাজেট বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি মশা। এডিস মশার মৌসুম শেষ হতেই রাজধানী দখল করেছে কিউলেক্স মশা। এর মধ্যে আগামী ১০ দিনে মশার ঘনত্ব রেকর্ড ছাড়াতে পারে এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। গবেষক দলের প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জানান, ‘ঢাকায় মশা জন্মানো স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করে সেখান থেকে মশা সংগ্রহ করা হয়েছে প্রথমে, পরে তা ল্যাবে নিয়ে শনাক্ত করা হয়। কিউলেক্স মশার লার্ভার ক্ষেত্রে প্রতি ৫০০ এমএল পানিতে মশার লার্ভা সংখ্যা গণনা করে ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। গত এক সপ্তাহের জরিপে ঢাকার বেশির ভাগ কিউলেক্স মশা জন্মানোর স্থানে ঘনত্ব ২০০-এর ওপরে পাওয়া গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেন ও ডোবায় অগণিত ডিম দিয়েছে মশা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ায় মশা জন্মানোর জন্য এটি উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া ডিমগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হবে। অতি জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে মশা জন্মানোর স্থানগুলোয় লার্ভিসাইড ছিটানো না হলে মার্চে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে মশার উৎপাত।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর