রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙল প্রাণের মেলা

মোট বিক্রি ৮২ কোটি টাকা, বই ৪ হাজার ৯১৯টি

মোস্তফা মতিহার

ভাঙল প্রাণের মেলা

মেলার শেষদিনে গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীর সমাগমে আজ থেকে আর প্রাণের উচ্ছ্বাস বইবে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। প্রিয় লেখকের পছন্দের বই কেনার জন্য স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে বেড়াবেন না বইপ্রেমীরা। আর বিক্রেতারাও ক্রেতাদের আশায় বইয়ের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করবেন না। আজ থেকে দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষার পালা। পাঠক, লেখকসহ বইপ্রেমীদের মধ্যে বিরহের সুর বাজিয়ে শেষ হলো মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’। বিকিকিনি ও প্রকাশনার দিকে বিগত বছরগুলোর সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবারের গ্রন্থমেলা। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির বিক্রি মিলিয়ে এবার ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গতবার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। এবার গতবারের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশনার দিক থেকেও গতবারের চেয়ে এগিয়ে আছে এবারের মেলা। এ বছর প্রকাশ হয়েছে ৪ হাজার ৯১৯টি নতুন বই। গতবার প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৬৮৫টি বই। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২৩৪টি বেশি নতুন বই প্রকাশ পায়। প্রকাশনা ও বিক্রিতে এগিয়ে থাকলেও মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশনায় এবারের মেলা পিছিয়ে রয়েছে। গতবারের মেলায় ১ হাজার ১৫১টি মানসম্পন্ন বই প্রকাশিত হয়। আর এবার সেই সংখ্যা ৭৫১টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা কমেছে ৪০০টি। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, এদিকে গত কয়েক বছরের হিসাব অনুযায়ী এ বছরের মেলা সফলতার সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ২০১৮ সালের বিক্রি ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালের বিক্রি ছিল ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ও ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ দিনে দিনে মেলা শুধু সফলতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোর সব রেকর্ড ভঙ্গ করায় প্রকাশকরা ভবিষ্যতেও মেলা নিয়ে নতুন করে আশাবাদী।

মেলায় মোট বই ৪ হাজার ৯১৯টি : এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৪ হাজার ৯১৯টি নতুন বই এসেছে। আর গতবার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৬৮৫টি। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২৩৪টি বই বেশি প্রকাশিত হয়। আর বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যানুযায়ী বরাবরের মতো এবারও সর্বোচ্চ প্রকাশনা ছিল কবিতার। এ বছর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৫টি। অর্থাৎ মোট বইয়ের এক-চতুর্থাংশ কবিতার বই। তবে বিক্রিতে বরাবরের মতো এবারও পিছিয়ে ছিল কবিতার বই। এ বছর গল্পের বই প্রকাশ হয় ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ৬৭, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি।

সমাপনী অনুষ্ঠান : সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ কারণে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের ডিজাইন, মূল মঞ্চের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব কিছুতেই মাসব্যাপী মূর্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান : সমাপনী মঞ্চে সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকার চেক, সনদ, ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান : ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সমাপনী অনুষ্ঠানে কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে, মঈনুস সুলতান রচিত ‘জোহানেসবার্গের জার্নাল’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত ‘স্মৃতির পথরেখা’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে ‘রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২০’ এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযান (এক ইউনিট), কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড (২-৪ ইউনিট), বাংলা প্রকাশ (প্যাভেলিয়ন)-কে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সব প্রকাশককে ৫০ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন : মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০-এর সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভ-সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী ও হাসান আরিফ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। সব শেষে ছিল লেজার শো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর