রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্ড দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছরে ২১৫ অভিযানে ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রতিরোধ, রাজস্ব আহরণ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় গত এক বছর ধরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড কমিশনারেট। অবৈধ পণ্যের বাজার হিসেবে পরিচিত পুরাতন ঢাকার ইসলামপুর, সদরঘাট, নয়াবাজার, উর্দ্দুরোড, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় নিয়মিত অভিযান চলছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২১৫টি অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন, ৩৯০টি বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড এবং ১১টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, কাস্টমস বন্ডের ধারাবাহিক এ অভিযানে দেশীয় শিল্পের বাজার পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং অবৈধ বন্ডেড ব্যবসার সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু ধারাবাহিক অভিযানের কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অবৈধ বন্ড ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা সংগঠিত হয়ে কাস্টমস বন্ডের অভিযানে বাধাদান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এই চক্রটি বিভিন্ন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করারও চেষ্টা করছে। গত বছরের ১৮ এপ্রিল পুরাতন ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জিন্দাবাজার চানমিয়া পেপার মার্কেটে অভিযানে গেলে অবৈধ ব্যবসায়ীরা সংঘবব্ধ হয়ে দোকানপাট বন্ধ করে হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলায় কাস্টমসের অভিযানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন ঢাকার নয়াবাজার কেন্দ্রিক অবৈধ বন্ডেড কাগজের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের প্রশ্রয়দাতা পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। এমবি ট্রেডার্সের মালিক মো. বেলাল বন্ডের অবৈধ কাগজের মূল জোগানদাতা। তাদের মূল সহযোগী ফরিদ ও অনীল বাবু। এই সিন্ডিকেট বাণিজ্যিক আমদানিকারক হিসেবে বৈধভাবে কিছু কাগজ আমদানি করলেও আড়ালে শত শত টন অবৈধ বন্ডেড কাগজ বিক্রয় করছে। রাত গভীর হলেই নয়াবাজার এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে এবং গুদামের সামনে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থেকে কাগজ আনলোড হতে দেখা যায়। বিভিন্ন বন্ডেড ফ্যাক্টরির ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধভাবে এসব পণ্য অপসারণ করে এখানে পাঠানো হয়। এসব অবৈধ ব্যবসায় বিনিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। চট্টগ্রামেও বন্ডেড পণ্যের অবৈধ ব্যবসায় বেলাল এবং তার ভাই ইকবাল, ইলিয়াসের মালিকানাধীন লিবার্টি গ্রুপের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামে এ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বন্ডেড পণ্যের মজুদে বিশাল গরমিল পায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশীয় শিল্প সুরক্ষার স্বার্থে অবৈধ ব্যবসা বন্ধে এ অভিযানের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশ পেপার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এ অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছেন, অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলে বিপুল রাজস্ব আদায় যেমন হবে, তেমনি দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।

সর্বশেষ খবর