ধানমন্ডির বাসিন্দা খায়রুল আনাম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার স্কুল জীবনের বন্ধু খোকন আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। খায়রুল তার ধানমন্ডির বাসায় তাকে দাওয়াত করেছেন। সঙ্গে আরও তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাতের খাবারে গরু, মুরগি, মাছ ছাড়াও নানা পদের তরকারি ছিল। খায়রুলের স্ত্রীর হাতের রান্না। একসঙ্গে পাঁচ বন্ধু বেশ আয়েশ করে খেলেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে তারা তাদের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করছিলেন।
খাবার শেষ করে তারা আড্ডায় বসেন। কিন্তু অল্প কিছু সময় পরেই ব্যবসায়ী বন্ধু রোমেল চলে যেতে চাচ্ছেন। কথা ছিল অনেক রাত পর্যন্ত তারা আড্ডা দেবেন। কিন্তু রোমেল কিছুই শুনতে চাচ্ছেন না। তার শরীর খারাপ লাগছে। বমি বমি লাগছে। আড্ডার সময়েই তিনি একবার টয়লেটে ঘুরেও এসেছিলেন। হঠাৎ কেমন যেন লাগছে তার। তাকে কেউ আটকালো না। বাসা কাছেই। রোমেল চলে যান। এরপর খোকন বলে, তারও পেট কেমন করছে। হয়তো দীর্ঘদিন পর দেশের খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। এ কারণে পেটে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পরক্ষণেই যখন আরেক বন্ধুও একই কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তারা আতঙ্কে। বলে কী? খায়রুল লজ্জা পাচ্ছে। তার বাসার খাবার খেয়ে কি এমন শরীর খারাপ করল। সেদিন আর আড্ডা হলো না। খায়রুলের মন খারাপ। বন্ধুদের বিদায় দিল। ঘরে রান্না করা খাবার খেয়ে তারা ৫ বন্ধুই সেদিন বিছানায় পড়ে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তবে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। একজনকে থাকতে হয় সাত দিন। তার জীবনই সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছিল। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। খায়রুলও ভাবছিল কেন এমন হলো। তার মনে পড়ল ধানমন্ডির একটি সুপার শপের কথা। যে সুপার শপ থেকে সেদিনকার দাওয়াতের মেনুর গরু, মুরগি আর মাছ কিনেছিল। খায়রুল নিশ্চিত হয়, সুপার শপের মাংস আর মাছ ছিল পচা। হয়তো রান্না করার সময় তা টের পায়নি তার স্ত্রী। জীবন বাঁচাতে মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে। কিন্তু সেই খাদ্য গ্রহণ করেই জীবন হয়ে উঠেছিল সংকটাপন্ন। যদিও এমন ঘটনা এখন আর নতুন কিছু নয়। মানুষ সময় বাঁচানো আর বাজারের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে সুপার শপে যায় বাজারের সদাই কিনতে। সুপার শপগুলো হালে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সুযোগে সুপার শপগুলো এখন আর সামগ্রীর মান ধরে রাখছে না। বিশেষ করে পচা বা মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে দেদার। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব সুপার শপে অভিযানও চালিয়েছে। আটক করেছে বস্তায় বস্তায় পচা মাংস ও মাছসহ অন্যান্য সামগ্রী। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এসব পচা মাংস আর খাদ্যের মধ্যে ছিল না। পরিণত হয়েছিল বিষে। সম্প্রতি রাজধানীর নামি-দামি বিভিন্ন সুপার শপ ও ২৬৮টি রেস্টুরেন্টে পচা মাংস খুঁজে পায় র্যাব। ওইসব প্রতিষ্ঠানে পচা মাংস সরবরাহ করার চালানপত্র র্যাব জব্দ করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পচা মাংস সংরক্ষণের অভিযোগে হিমাগার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেওয়াসহ মোট ২৮ জনকে জরিমানা করে র্যাব। র্যাবের এসব অভিযানে অংশ নেওয়া প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. এমদাদুল হক জানান, সুপার শপ আর নামি-দামি রেস্টুরেন্টে কী মাংস সরবরাহ করা হয় তা বলে বুঝানো যাবে না। হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে ভয়াবহ দৃশ্য। বেশি মুনাফার আশায় আমদানিকারক বিদেশ থেকে এসব নিয়ে আসে। একই কারণে সুপার শপ ও হোটেলগুলোও বিক্রি করে।