মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নেতৃত্ব বদল হবে যুব মহিলা ও তাঁতী লীগে

এপ্রিলে সম্মেলন জায়গা পাবেন না বিতর্কিতরা

রফিকুল ইসলাম রনি

নেতৃত্ব বদল হবে যুব মহিলা ও তাঁতী লীগে

পাপিয়াকান্ডের পর মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে দলের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। এপ্রিল মাসে এসব সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জায়গা পাবেন না বিতর্কিত নেতা-নেত্রীরা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয়। ক্যাসিনো ঝড়ের পর এ সংগঠনগুলোয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, একই বছরের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ এবং ১৯ মার্চ তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সূত্রমতে, ক্যাসিনোকান্ডে যুবলীগকে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনার পর এবার যুব মহিলা লীগেও একই সূত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। সংগঠনটির নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকান্ড প্রকাশ্যে আসার পর অবাক আওয়ামী লীগের নেতারাও। সংগঠনটির নেতাদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন  উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্ব আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সম্মেলনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০০৪ সালে প্রথম সম্মেলন হওয়ার পর থেকে নেতৃত্বে আছেন নাজমা আকতার ও অপু উকিল। বিরোধী দলের রাজনীতিতে যুব মহিলা লীগের যথেষ্ট অবদান ছিল। রাজপথে মিছিল, মিটিং ও পুলিশের লাঠিপেটা সহ্য করতে হয়েছে তৎকালীন নেত্রীদের। কিন্তু গত এগারো বছর টানা ক্ষমতায় থাকায় এ সংগঠনে অনেক হাইব্রিড ও সুবিধাবাদী ঢুকে এর ভাবমূতিতে কালিমা লেপন করেছে। নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে জেলা পর্যায়ের নেত্রীরাই পতিতাবৃত্তির ব্যবসা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। সে কারণেই সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথসভায় সংগঠনের সম্মেলনের সময় চেয়েছেন সভাপতি নাজমা আকতার। এ বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যুব মহিলা লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে মার্চ মাসে। মেয়াদ শেষ হলে সম্মেলন হবে। সম্মেলনের কাজ চলমান। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনেরও সম্মেলন হচ্ছে। এটা চলবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এখন আর সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। মার্চে যে তিন সংগঠনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এপ্রিলেই তাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই। গত ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সাফিয়া খাতুন সভাপতি এবং মাহমুদা বেগম সাধারণ সম্পাদক হন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ কম থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিহীনতার অভিযোগ রয়েছে। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে মাঠের কর্মসূচিতে খুব একটা দেখাও মেলে না। নির্বাচনগুলোতেও নারী ভোটারদের টানতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না সংগঠনটি। পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনেও শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ তাঁতী লীগের সর্ব শেষ সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলীকে সভাপতি এবং খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৭০টিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। তবে এর অনেকই যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি। এ ছাড়া তাঁতী লীগ দিবস ভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে মাঠের কর্মসূচিতে খুব একটা সক্রিয় নয়। জানতে চাইলে তাঁতী লীগ সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সম্মেলনের খুব বেশি দেরি হবে না। কেন্দ্র থেকে আমাদের এপ্রিলে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। আমরাও সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুত।

সর্বশেষ খবর