মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলপিজি

বর্তমানে ব্যবহারকারী প্রায় ৪০ লাখ বার্ষিক চাহিদা ১০ লাখ টন এলপিজিতে চলছে সাত হাজার গাড়ি

জিন্নাতুন নূর

জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলপিজি

জ্বালানি হিসেবে দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লিকুইডিফাইড পেট্রলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ ও যানবাহনে অটোমোটিভ জ্বালানি হিসেবে এলপিজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাঁচ বছর আগেও যেখানে বছরে এলপিজির বাজার ছিল মাত্র ৮০ হাজার টনের। বর্তমানে সেই বাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টনে। এলপিজির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী পাঁচ বছরে তা বেড়ে ২০ লাখ টনে দাঁড়াবে।

জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও দেশে এলপিজির চাহিদা ছিল আট লাখ ২৫ হাজার টন। বর্তমানে সেটি ১০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। আর এলপিজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এর কারণ রাজধানী ছাড়াও আশপাশের জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এলপিজির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তবে এলপিজির বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই মফস্বলের। আবার প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে এলপিজির সিলিন্ডারের কাছাকাছি হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে সমস্যা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে অনেকেই প্রাকৃতিক গ্যাসের চুলার বদলে এখন এলপি সিলিন্ডারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। তাছাড়া আগে যেসব ছোটখাটো হোটেল-রেস্টুরেন্টে জ্বালানি হিসেবে কাঠ বা কেরোসিন তেলের ব্যবহার হতো, এখন সেগুলোতেও এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। কেরোসিনের দুর্গন্ধ আর লাকড়ির ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে হোটেলগুলোতে এলপিজি ব্যবহার করছে। এলপিজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানান, যানবাহনেও দ্রুতগতিতে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। গত দুই বছরে এলপিজিতে চলা গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এখন প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করা হয়। আর ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এলপিজি পাম্পের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারের জ্বালানি বিভাগ ও এলপিজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার জন্য প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে ৫৭টি কোম্পানি। এর মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন বা বাজারজাত করার জন্য অনুমোদন পেয়েছে সাতটি। এই সাতটিসহ চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ২২টি কোম্পানি খুচরা বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি করছে। এমনকি ২০২৫ সালে দেশে এলপিজির যা চাহিদা দাঁড়াবে সেটা সরবরাহ করার সক্ষমতা এখনই তৈরি হয়েছে।

মূলত বিগত বছরগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেশ কয়েকবার বাড়ায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজির চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। মজুদকৃত ২৭.৯ টিসিএফ গ্যাসের মধ্যে ১৬.৯ টিসিএফ গ্যাস ইতিমধ্যে ব্যবহার হয়েছে। আর নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও খনন না হলে ২০৩১ সাল নাগাদ বাকি গ্যাসের মজুদও ফুরিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থায় সরকার আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে আবাসিক কাজে ব্যবহারের জন্য এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের চাহিদা বাড়ে। এ ছাড়া ২০১৫ সাল থেকে সিএনজি গ্যাস স্টেশনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় যানবাহনের ব্যবহারের জন্য পরবর্তীতে অটোগ্যাসের ব্যবহারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ খবর