মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

পাপিয়ার সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

এনামুল-রূপন ছয় দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়াকে ওয়ারী থানার সোনা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের মামলায় ছয় দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে ওয়ারী থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ১০ দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে পুলিশের কাছে রিমান্ডে থাকা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক শাহিন আরা মমতাজের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি এরই মধ্যে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। এরই মধ্যে দুদক তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে একটি পাঁচ তারকা হোটেলকে। তবে মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা অপরাধ-সাম্রাজ্যে পাপিয়ার বিচরণ, মদদদাতা ও সুবিধাভোগীদের নাম জানতে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, পাপিয়ার আয়ের উৎস এবং তার সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে একটি কমিটি। এ জন্য একটি অভিজাত হোটেলকে এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যাসিনো ব্রাদার্সের রিমান্ডের আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিদের বাসা থেকে জব্দ করা সোনার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং এতে আর কেউ জড়িত আছেন কি না তা জানার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। এ সময় আসামিদের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মনসুর রিপন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামিদের ছয় দিন করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রিমান্ডের অনুমতি দেয় আদালত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এনামুল হক ভূঁইয়ার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ২৬ কোটি টাকাসহ বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা এবং সাড়ে ১২ কেজি সোনা জব্দ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এনু-রুপনের বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় একটি মামলা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু-রূপন মতিঝিলের বিভিন্ন ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে আসছিলেন। ওই অবৈধ টাকার একাংশ দিয়ে আসামিরা বিভিন্ন সময় সোনা কিনে তাদের বাসায় জমা রাখেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে এই অপকর্ম আড়াল করার জন্য টাকা ব্যাংকে না রেখে বাসার লোহার গোপন লকারে রেখেছিলেন তারা।

এর আগে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপন ও তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে ৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা থেকে সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) তাদের গ্রেফতারের পর দুই ভাইকে চার দিন এবং তাদের সহযোগীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

এদিকে ডিবির হেফাজতে ১৫ দিনের রিমান্ডে থাকা পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্যের দফায় দফায় যাচাই-বাছাই চলছে। গতকাল তাদের রিমান্ডের সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবে এরই মধ্যে পাপিয়া ও তার স্বামীর অবৈধ সম্পদের উৎসের বিষয়ে ডিবির পক্ষ থেকে দুদক কর্মকর্তাকে অর্থ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর