শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্ধু নয় মৃত্যুদূত

মির্জা মেহেদী তমাল

বন্ধু নয় মৃত্যুদূত

একসঙ্গে মুদি দোকানে চাকরি করতেন সুমন ও সোহেল হোসেন। সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে এ দুই যুবকের পরম বন্ধুত্ব। অনেক দিনরাত গল্প আড্ডায় একসঙ্গে কেটেছে তাদের। পরিবারের সুখ-দুঃখও একে অপরকে জানিয়েছেন। পরিবারের কথা বলে সুমনের কাছ থেকে সোহেল টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে অনিয়মের কারণে দোকান থেকে সোহেল চাকরিচ্যুত হয়। অভাব-অনটনে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সোহেল দিনমজুরের কাজ শুরু করে। এদিকে ধার নেওয়া টাকা ফেরত চাওয়াই যেন বিপদ নেমে আসে সুমনের জীবনে। কে জানত, টাকা চাইলেই কৌশলে ডাব খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে সুমনকে কুপিয়ে হত্যা করা হবে। আবার বস্তাবন্দী করে নির্জন বাগানে মাটিচাপা দেওয়া হবে। বন্ধু এত ভয়ঙ্কর হতে পারে! লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মুদি দোকানের কর্মচারী সুমন হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বন্ধু সোহেল। গত বছর জুলাইয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক রায়হান চৌধুরী এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে পুলিশের কাছে সোহেল একই জবানবন্দি দেয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাওসারুজ্জামান। আদালত ও থানা সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুর বাজারের মো. ইউসুফ আলীর মুদি দোকানে সুমন (২৬) ও সোহেল (২৮) কয়েক বছর ধরে চাকরি করে আসছেন। সুমন কুমিল্লার মুরাদপুরের সুজানগর গ্রামের মো. ইউনুছ আলীর ছেলে। সোহেল রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের উত্তর নাগমুদ গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুমনের কাছ থেকে সোহেল টাকা ধার নেয়। পাওনা টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। প্রায় এক মাস আগে অনিয়মের কারণে সোহেল চাকরিচ্যুত হয়। এরপর হঠাৎ ২১ জুলাই রাত থেকে সুমন নিখোঁজ হয়। সম্ভাব্য স্থানগুলোতে খুঁজে না পেয়ে সুমনের বাবা ইউনুছ আলী রামগঞ্জ থানায় অপহরণের লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিকালে সোহেলের বাবা বাবুল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বাবাকে আটকের খবর পেয়ে সোহেল রাতেই থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে। হত্যার ঘটনা স্বীকার করে সোহেল। পরে বিকালে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাগমুদ গ্রামের মিজিবাড়ির নির্জন বাগান থেকে মাটিচাপা অবস্থায় সুমনের বস্তাবন্দী অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার হাত, মাথা ও ঘাড়ে কোপানোর চিহ্ন ছিল। মরদেহ উদ্ধারের সময় পুলিশের সঙ্গে সোহেলও উপস্থিত ছিল। সোহেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে রামগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কাওসারুজ্জামান জানান, আসামি সোহেল একাই বন্ধু সুমনকে হত্যা করেছে। সোনাপুর থেকে ২১ জুলাই বাড়ির পথে এগিয়ে দেওয়ার জন্য সুমনকে ডেকে নেয় সোহেল। পরে সোহেল ডাব খাওয়ানোর কথা বলে সুমনকে রাত ১১টার দিকে বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে ধার নেওয়া টাকার প্রসঙ্গে দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দা দিয়ে কুপিয়ে সুমনকে হত্যা করা হয়। পরে প্লাস্টিকের বস্তাবন্দী করে তার মরদেহ বাগানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, বন্ধু সম্পর্কটি অনেক গভীর। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায় না। আর যেখানে বন্ধুত্ব হয় না, সেখানে টাকা ধার দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়নি সুমনের। সোহেল কখনই বন্ধু হতে পারেনি সুমনের। সোহেল তার মৃত্যুদূত হয়ে উঠেছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর