বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে খুলছে ১২ মার্চ

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে খুলছে ১২ মার্চ

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে খুলছে এ মাসেই -রোহেত রাজীব

আগামী ১২ মার্চ খুলে দেওয়া হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন। তবে সড়কটি খুলে দেওয়া হলেও থাকছে বেশ কিছু ত্রুটি। বিশেষ করে বিশ্বের কোথাও এক্সপ্রেসওয়ে বা হাইওয়েতে কোনোরকম বাস-বে বা বাস স্টপেজ না থাকলেও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে থাকছে বেশ কয়েকটি বাস-বে। এ ছাড়া সড়ক মিডিয়ানের (দুই রাস্তার মাঝখানের জায়গা) যে বেরিয়ার দেওয়া হয়েছে তাতেও আছে ত্রুটি। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত  সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দূরত্ব  ৫৫ কিলোমিটার। সদ্য নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব পার হতে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সুফল ভোগ করা যাবে। তবে এখন ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু সড়ক সাইন এবং কিছু টুকটাক কাজ বাকি। আগামী ১২ মার্চের আগেই এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এই প্রকল্পের। পদ্মার ওপার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার অংশের কাজ। সময় এবং ব্যয় বেড়ে শেষ পর্যন্ত চলতি মাসে এসে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরবর্তিতে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কিছু কাজের জন্য পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুনে চার হাজার ১১১ কোটি টাকার আরেকটি পৃথক ডিপিপি অনুমোদন করে সরকার। এই ডিপিপি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত। দুটি ডিপিপি মিলিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা। আট লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েটি ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়ক এবং দুই পাশের সার্ভিস লেনের কাজ শেষ হয়ে গেছে প্রায় শতভাগ। এক্সপ্রেসওয়ের মিডিয়ানের (দুই সড়কের মাঝখান) বেরিয়ার নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। কিন্তু স্টিল বেরিয়ার ও ব্লক বেরিয়ার একই লাইনে থাকার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ত্রুটির কারণে এই এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়ে গেছে। ঢাকা থেকে মাওয়ায় যাওয়া ও আসার পথে সরেজমিন দেখা গেছে, এই এক্সপ্রেসওয়েতে দুই পাশে বেশ কয়েকটি বাস-বে নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও হাইওয়ে বা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস বে বা স্টপেজ না থাকলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন এই এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে বসানো হয়েছে। সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বাস-বে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা খুবই বিপজ্জনক। দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে এগুলো। যদিও যুক্তি দেখানো হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে এসব বাস-বেতে বাস দাঁড়াবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দীন খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত বাস-বে এক্সপ্রেসওয়েতে রাখা হয় না। এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি। 

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেস হাইওয়ে। যেখানে মূল সড়কে থাকবে চারটি লেন। সঙ্গে সড়কের দুই পাশে থাকছে সাড়ে ৫ মিটার করে (একেক পাশে দুই লেন করে) দুটি সার্ভিস লেন। এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে টোল দিতে হবে সব ধরনের যানবাহনকে।

হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার পর এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-ধোলাইপাড়ে রয়েছে ইন্টারসেকশন। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ‘মনুমেন্ট’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এখান থেকেই শুরু এই এক্সপ্রেসওয়ের। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ছয়  লেনের এ এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ট্রাফিক ক্রসিং থাকবে না। এ এক্সপ্রেসওয়ের মাঝ বরাবর রয়েছে ৫ মিটার প্রস্থের মিডিয়ান। এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ হয়েছে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এই এক্সপ্রেসওয়েতে মোট সেতুর সংখ্যা হচ্ছে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু ২০টি ও আরসিসির ১১টি। নির্মাণ হয়েছে ৪৫টি কালভার্টও। এ ছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুর ফ্লাইওভার। এ ছাড়া জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও ভাঙ্গায়। এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে ২টি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর