বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি নড়াইল

স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ, চাপে বিএনপি

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলে রাজনীতির ময়দানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে। কারণ কোন্দল মিটিয়ে দলটি এখন নিশ্চিন্ত। অবশ্য উল্টো অবস্থায় রয়েছে বিরোধী পক্ষ বিএনপি। একে তো তাদের সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ, তার ওপর মামলার চাপে নেতা-কর্মীদের গুটিয়ে চলতে হচ্ছে। সেই তুলনায় বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে সক্রিয় রয়েছে।

ফুরফুরে মেজাজে আওয়ামী লীগ : বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতকে সম্মান করে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে জয়লাভও করেন। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাশরাফি এরই মধ্যে নিজেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তৈরি করে ফেলেছেন। সর্বসাধারণের মাঝে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এই বাস্তবতায় দীর্ঘ দিন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত নড়াইলবাসী মনে করছেন, মাশরাফিকে দিয়েই নড়াইলের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। ওয়াকেবহালরা মনে করেন, নড়াইলের আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে মাশরাফি ছাড়া বিকল্প কেউ ছিলেন না। বিষয়টি দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। জানা গেছে, কোন্দল দূর হওয়ায় এবং ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সফল সম্মেলনের পর দলীয় নেতারা ফুরফুরে মেজাজ ফিরে পেয়েছেন।

মামলার চাপে গুটিয়ে বিএনপি : এক সময় তারুণ্যনির্ভর ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর পর সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। আজ সেই তারুণ্য নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর নড়াইলে দলটি ক্রমেই গুটিয়ে যেতে থাকে। সেই থেকে আজও পর্যন্ত আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। যদিও নেতা-কর্মীরা স্বীকার করছেন যে, আগে শহরে মিছিল মিটিং করতে দিত না পুলিশ। এখন তারা মিছিল মিটিং করতে পারছেন। তবে মামলার ভয়ে সংগঠকদের রাতে ঘুম হয় না। কখন নতুন মামলা হবে- এ আতঙ্কেও তাদের গুটিয়ে চলতে হয়। ফলে সাংগঠনিক কাজকর্মে তেমন অগ্রগতি নেই। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলটির জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর হোসেন থাকেন ঢাকায়। সেখান থেকেই তার নির্দেশে দল পরিচালিত হয়। তার নির্দেশ মোতাবেকই সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করানোর চেষ্টা করেন। এর বাইরে কেউ কোনো ভূমিকা পালন করছেন না। দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংগঠকদের নামে একাধিক মামলা হওয়ায় নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়াও একাধিক মামলা নিয়ে অনেক নেতা-কর্মীই ফেরারি জীবনযাপন করছেন। যে কারণে নেতা- কর্মীরা এখন দলীয় কর্মকান্ডের চেয়ে মামলাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।

সক্রিয় জাপা, গোপনে জামায়াত : বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি নড়াইলে আগের চেয়ে শক্তিশালী। প্রতিষ্ঠাতা মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যু উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিরোধী দল হিসেবে দলটি শক্তির পরিচয়ও দিয়েছে। তাছাড়া অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  নির্বচিত হওয়ায় জেলা জাতীয় পার্টির সব নেতা-কর্মীই এখন খোশ মেজাজে রয়েছেন। এদিকে দৃশ্যত জামায়াতে ইসলামীর কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়লেও গোপনে সংগঠকরা সক্রিয় বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় একাধিক মহিলা কর্মী গ্রেফতারের ঘটনা থেকে জামায়াতের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। বর্তমান নড়াইলে জামায়াতের মহিলা কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় গোপন মিটিং করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর