বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিআইপি সেবায় ব্যস্ত ইসির কর্মকর্তারা

গোলাম রাব্বানী

ভিআইপি সেবায় ব্যস্ত ইসির কর্মকর্তারা

ঢাকা বিভাগের একজন মহিলা এমপি। একাধিকবার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেন। দশম সংসদ নির্বাচনে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল ১০ম শ্রেণি পাস। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তা পরিবর্তন করে ৯ম শ্রেণি করেন। একই সঙ্গে তিনি স্বামীর নামও পরিবর্তন করেন। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে এক নির্বাচন কমিশনারের রুমে চা খেতে এসে তিনি এনআইডি সংশোধন করে নিয়ে যান। শুধু ঢাকা বিভাগের এই এমপি নন, বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বড়-ছোট নেতারাও নির্বাচন কমিশনে ভিআইপি মর্যাদায় আইডি কার্ড সংশোধন করে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা  নতুন ভোটার করা এবং সংশোধনীর জন্য ইসির কাছে চিঠিও পাঠাছেন। একইভাবে ইসিতে ভিআইপি মর্যাদা পান বিনোদন জগতের তারকারাও। বড় বড় কর্মকর্তাদের রুমে বসে থেকেই তারা স্মার্ট কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনী ও নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের কার্ড সংশোধন করে নিয়ে যান। বেশি ভিআইপি আসেন ইসির উপসচিব ও যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে। তারা অফিসের কাজ বাদ দিয়ে সারাক্ষণ ভিআইপি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ভিআইপিদের বিশেষ সেবা দিয়ে কর্মকর্তারা বাড়ি-গাড়িও করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, ভিআইপি এলে আর অন্য কাজ হয় না। তখন আমরা বাধ্য হয়ে অন্য সব কাজ বন্ধ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কাজ করে দেই। বলেন, স্মার্ট কার্ডের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের আইরিশ দেওয়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনীর কাজেই মূলত তারা আসেন। অনেক সময় তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও ভিআইপি মর্যাদায় সব কিছু চান। একটু এদিকে-ওদিকে হলে বকাঝকা শুরু হয়।

জানা গেছে, ভিআইপিদের জন্য বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ ভোটারদের। কোনো ভিআইপি ইসির দফতরে কাজে এলেই সাধারণ মানুষের কাজ বাদ দিয়ে তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা। এ সময় সাধারণ মানুষের অভিযোগ শোনারও কেউ থাকে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সাধারণ ভোটারদের। গত সোমবার নির্বাচন ভবনে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইসির এক যুগ্ম-সচিবের রুমের সামনে অপেক্ষা করছেন বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ। তারা এনআইডির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান তার সঙ্গে। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরাও নিউজের বিষয়ে কথা বলতে ওই কর্মকর্তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই কর্মকর্তার স্টাফদের কাছে জানতে চাওয়া হয় রুমে কারা আছেন? তখন স্টাফরা বলেন, ভিআইপি আছেন। মিটিং চলছে। পরে খবর নিয়ে জানা যায় আসলে ওই ভিআইপি হচ্ছেন কর্মকর্তার বন্ধু।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতা পরিচায়দানকারী এক ব্যক্তি ইসি কর্মকর্তাদের রুমে বসে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, স্মার্ট কার্ড তৈরি, নতুন ভোটার করা এবং ভোটার স্থানান্তরসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের কাজ করে নেন। আবার তিনি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকিও দেন। অনেকে বলেন, ইসির যুগ্ম-সচিবরাও নাকি এই নেতাকে দেখলে দাঁড়িয়ে যান।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ও নতুন ভোটার হতেও লাগে টাকা : নির্বাচন কমিশনের ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা অফিসে নতুন ভোটার হতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা; নতুন ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে উপজেলা কর্মকর্তা, কর্মচারীরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এটা শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের ইসির উপজেলা নির্বাচন অফিসে টাকা নেওয়ার বিষয়টা নিয়মে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে ইসির ডাটাএন্ট্রি অপারেটরদের টাকা দিলে দ্বিতীয়, তৃতীয়বারও ভোটার হওয়া যায়। এক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কেননা যারা আগে ভোটার হয়েছেন, তারা তখন দুই আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছেন। এখন নতুন করে আবারও ভোটার হতে চাইলে ডাটাএন্ট্রি অপারেটররা টাকার বিনিময়ে আগের সব তথ্য ডিলেট করে দিয়ে নতুন করে ভোটার করছেন।

সর্বশেষ খবর