বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রভাব পড়েছে যেসব খাতে

করোনার নেতিবাচক প্রভাব মেগা প্রকল্পে

রপ্তানি কমেছে ৫.১১ শতাংশ, আমদানি কমেছে ২.৭৩ শতাংশ জ্বালানি খরচ সাশ্রয় হবে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ছয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চূড়ান্ত রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আপৎকালীন কোনো খাতে জরুরিভাবে অর্থের সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। মার্চ-এপ্রিলে পুরোদমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হলে বন্দরে পণ্য খালাসে যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে বলা হয়েছে তারা যেন কাস্টমসকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়; মেগা প্রকল্পগুলো যতটা সম্ভব সময়মতো বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য সব বিকল্প ব্যবস্থা চালু রাখতে ইআরডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা হয়, যাতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, চীনের পর করোনাভাইরাস যেহেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ ভাইরাসের প্রভাব ভবিষ্যতে কত দিনব্যাপী থাকবে তাও নিশ্চিত নয়, সে কারণে দেশের অর্থনীতিকে যতটা সম্ভব নেতিবাচক প্রভাবমুক্ত রাখার ওপর এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ছাড়াও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং তারল্য ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ ও রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে। এ অবস্থায় সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে আমদানি-রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যবসাসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষতি লাঘবে করণীয় নির্ধারণ করতে; রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে; আর এসব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগকে।

করোনার প্রভাব নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলো যা বলেছে : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি উভয় খাতেই। জানুয়ারি শেষে দেশের আমদানি ২ দশমিক ৭৩ ও রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অর্থ বিভাগ থেকে আরও বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে জ্বালানি আমদানি বাবদ সরকারের ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাশ্রয় হবে। অর্থ বিভাগ আরও জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং ভারসাম্যপূর্ণ রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। প্রবাস আয় বাড়ার কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান এবং অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে বৈশ্বিক মন্দা স্পষ্ট হলেও উন্নয়ন বাজেট পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার হার ৩৪ শতাংশ, যা সর্বনিম্ন। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংকমুখী হওয়ায় ব্যাংক খাতের তারল্য বাড়ছে। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনে ঘাটতি দূর করা যাবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য ব্যবস্থাপনা, সাপ্লাই চেইনে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করেছে। ইআরডি চীনা অর্থায়নে ও প্রযুক্তি সহায়তায় নির্মিতব্য প্রকল্প পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, বিআরটি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করেছে। এ ছাড়া করোনার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে এপ্রিলের পর দেশের শিল্পে কাঁচামালসহ, প্রযুক্তি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য মূলত আমদানিনির্ভর। চৈনিক নববর্ষের ছুটির আগেই ব্যবসায়ীরা অধিক হারে পণ্য আমদানি করায় মার্চ পর্যন্ত শিল্পের কাঁচামালের ঘাটতি হবে না।

সর্বশেষ খবর