বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

কখনো বাবুর্চি কখনো সাপুড়ে

মির্জা মেহেদী তমাল

কখনো বাবুর্চি কখনো সাপুড়ে

৪৪ বছর বয়সী ওমর ফারুক। ঢাকার ধামরাইয়ের হরিদাসপুর ধোপের বাড়ি জামে মসজিদে ১৫ বছর ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ওই এলাকায় হাফেজিয়া নুরানি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। সেখানে পড়ত এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর ছেলে। তিনিই ফারুককে ইয়াবা ব্যবসার প্রস্তাব দেন। তার কথামতো ছয় মাসে চারটি চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে যান ফারুক। প্রতিটি চালানের জন্য আসা-যাওয়া খরচ বাদে তিনি পান ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ইমাম ফারুককে গ্রেফতারের পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। তার কোমরে ও পাঞ্জাবির পকেটে বিশেষ কৌশলে রাখা ৬ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।

গত বছরের ২৬ জানুয়ারি নগরের মইজ্জ্যার টেক এলাকায় ইয়াবা পাচারের সময় এনায়েত উল্লাহ নামে মসজিদের এক ইমামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার পেট থেকে ২ হাজার ইয়াবা বড়ি বের করা হয়। নগরের চন্দনপুরা শাহি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘খারাপ কাজের জন্য দুনিয়ায় শাস্তি তো আছেই। পরকালের ভয়াবহ শাস্তির কথাও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন ইমামরা। এতে অনেক মানুষ খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। দুঃখের বিষয়, ইমাম নামধারী কিছু ব্যক্তি খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রকৃত ইমাম শত অভাবে থাকলেও অন্যায় পথে পা বাড়াবেন না।’

সাপুড়ে সেজে সাপের বাক্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ৫ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়। টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা থেকে ৬ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তারা বাবুর্চি সেজে মাদক পাচার করে আসছিলেন। পর্যটকের বেশে ইয়াবা পাচারের সময় আটজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাব কঠোর অবস্থানে থাকায় পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে সমাজের ভিন্ন পেশার লোকজনকে লোভে ফেলে পাচারে ব্যবহার করছে। যত কৌশলই নেওয়া হোক। কেউ পার পাবে না।

বাবুর্চি, সাপুড়ে, পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার চলছে। তল্লাশি অভিযান জোরদার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এ কৌশল নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে কিছু চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগই অধরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ইয়াবা পাচার হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পথে অভিযান জোরদার করলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অন্য কৌশল বেছে নেন।

সর্বশেষ খবর