বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নাগরিকত্ব আইন মামলায় পক্ষভুক্তি চায় জাতিসংঘ

অসন্তুষ্ট ভারত, নর্দমায় মিলল ১১ লাশ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের অনুমতির জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচআরসি) দরখাস্ত করেছে। এটা এক বিরল পদক্ষেপ। এতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুবই অসন্তুষ্ট। এর আগে ভারতকে কখনো জাতিসংঘের কোনো সংস্থার প্রকাশ্য সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। ২৭ ফেব্রুয়ারি দরখাস্তটি করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেল্ট। দরখাস্তে বলা হয়, ‘সিএএ-র বিরুদ্ধে দিল্লিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা উদ্বেগজনক বিষয়।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রভিশ কুমার বলেন, ‘আইন তৈরি করে ভারতীয় সংসদ। সংবিধান মেনেই আইন প্রণয়ন করা হয়। এ বিষয়ে বিদেশি কোনো পক্ষের নাক গলানো মানে ভারতের সার্বভৌমত্ব লংঘন করা।’

মুখপাত্র বলেন, ‘বিভক্তিজনিত ট্র্যাজেডি থেকে উৎসারিত মানবাধিকার সমস্যা মোচনে অঙ্গীকারাবদ্ধ ভারত। সে আলোকেই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচার বিভাগের ওপর আমাদের সুদৃঢ় আস্থার প্রতিফলন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে আসবে- এই বিশ্বাস আমাদের আছে।’

গত ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হয় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। এতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারতে সিএএ পাস হওয়ার পরপরই এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের এই সংশোধনী ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদে বৈষম্যমূলক প্রভাব ফেলবে। তার মতে, সব অনুপ্রবেশকারীরই সুরক্ষা, সম্মান ও মানবিক সহায়তা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, ভারতের সিএএ বৈষম্যমূলক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পরিপন্থী। সিএএ ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) মুসলিমদের হেনস্তা করার জন্যই করা হয়েছে।

দিল্লির নর্দমাতেই মিলল ১১ লাশ : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ভারতের রাজধানীর নর্দমাতে (ড্রেনে) এখন পর্যন্ত ১১টি লাশ ভেসে উঠেছে। সব মিলিয়ে কয়েক দিনের ওই সহিংসতায় অন্তত ৪৭ জন নিহত ও ৩৫০ জন আহত হয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, দিল্লির যে প্যাঁচানো নর্দমাগুলো এতদিন গৃহস্থালির বর্জ্য নিষ্কাশন, এমনকি শহরের বিভিন্ন এলাকা চিনতে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেগুলোই এখন আরেক আলোচনার উৎস হয়ে উঠেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নর্দমায় প্রথম যার মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল, গোয়েন্দা বিভাগের সেই কর্মী অঙ্কিত শর্মাকে সহিংসতার মধ্যে উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

সর্বশেষ রবিবার ও সোমবার নর্দমাতে পাওয়া গেছে পাঁচটি অজ্ঞাত মৃতদেহ। এর মধ্যে কয়েকটির অবস্থা এমন যে সেগুলো শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভেসে ওঠা মৃতদেহগুলোর সবই দিল্লির সহিংসতায় নিহত কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ পুলিশের। দিল্লির এ নর্দমাগুলো এমনই গোলকধাঁধা সৃষ্টি করে যে বাসিন্দারাও অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

“এর একটা কারণ, এগুলো দেখতে একই রকম। অন্য একটি কারণ, বেশির ভাগ বাসিন্দাই এ নর্দমাগুলোকে এলাকার নামে চেনেন। অনেক সময় এসব এলাকার মধ্য দিয়ে কয়েকটি করে নর্দমা প্রবাহিত হয়েছে। এমনো হতে পারে যে, আমরা যখন গোকলপুরী নর্দমা বা ভজনপুরীর নর্দমার কথা বলছি, তখন আমরা আসলে একই নামের ভিন্ন ভিন্ন নর্দমার কথা বলছি,” বলেছেন সহিংসতা কবলিত যমুনা বিহারের বাসিন্দা হামজা আহমেদ।

নর্দমাগুলো সবই ভাসমান বর্জ্য, জলজ উদ্ভিদ ও পলির পুরুস্তরে ভর্তি, জানিয়েছেন হামজার প্রতিবেশী কনিষ্ক কুমার।

সর্বশেষ খবর