বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের ভোক্তার তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকায় আজ ৫ম টিকফা বৈঠক, আলোচনার টেবিলে দুই দেশের ১০ ইস্যু

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স (ডিজিটাল প্লাটফর্ম)-এ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের সব তথ্য দেশেই সংরক্ষণ করতে হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশি ক্রেতাদের যাবতীয় তথ্য তার দেশে সংরক্ষণের প্রস্তাব দিচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি টিকফা’র ৫ম বৈঠকে এটিসহ চারটি ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব পাঠিয়েছে দেশটি। অন্যদিকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালসহ ছয়টি ইস্যু চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ক্রিস্টোফার উইলসন নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ এবার জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ইস্যুটি এজেন্ডার এক নম্বরে রেখেছে। এ ছাড়া মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা চাওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও যাতে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সুবিধা দেয় সে বিষয়েও প্রস্তাব দেওয়া হবে।

টিকফা’র বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারের টিকফায় আমাদের ফোকাস হচ্ছে বিনিয়োগ আকর্ষণ। আমরা আরও বেশি মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগ চাইছি। প্রস্তুতি সভার পর মনে হচ্ছে, তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। এ ছাড়া জিএসপি পুনর্বহালের ওপরও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এবারের বৈঠকের জন্য চারটি ইস্যুতে মোট ১২টি বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে এর আগে আলোচনা হয়নি এমন বিষয় রয়েছে তিনটি। নতুন বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে ‘ডিজিটাল ট্রেড : ক্রস বর্ডার ডাটা ফ্লো’ শীর্ষক। কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বিশ্বে এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন কোম্পানি অ্যামাজন, চায়নিজ কোম্পানি আলিবাবা প্রতি বছর কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে। বাংলাদেশেও ই-কমার্স বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিমানের টিকিট থেকে চাল-ডাল এখন সবই মেলে ঘরে বসে। এ ধরনের ডিজিটাল বাণিজ্যে ক্রেতাদের তথ্য সংরক্ষিত থাকে রাষ্ট্রের কাছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সুরক্ষা, গোপনীয়তা, আর্থিক ব্যবস্থাপনার পরিচালনা, আইন প্রয়োগকারী (মেধাস্বত্ব) সংরক্ষণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারগুলো সাধারণত ডেটা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এগুলো ডিজিটাল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈধ উদ্বেগ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে যে ডিজিটাল বাণিজ্য হয়, তাঁর ক্রেতাদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তারা জানান, এই ইস্যুটি নতুন বলে ঠিক কী কারণে তারা বাংলাদেশের ক্রেতাদের তথ্য নিতে চাইছে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আলোচনার পর হয়তো এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এমনও হতে পারে অ্যামাজনসহ মার্কিন কোম্পানিগুলো ১৬ কোটি ভোক্তার বাজার হিসেবে বাংলাদেশকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোর অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এবং ভোগব্যয় দুটিই বেড়েছে।

বাংলাদেশ চাল রপ্তানিতে কী পরিমাণ ভর্তুকি দেয়-সেটিও জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে যে আর্থিক প্রণোদনা সেটি ডব্লিউটিও-এর বিধান মেনেই করা হয়। এ ছাড়া ‘গ্লিফোসেট’ নামক একটি কীটনাশক দমনকারী রাসায়নিক বাংলাদেশে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বাধা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির মোনসান্টো নামক প্রতিষ্ঠান ‘রাউন্ড-আপ’ নামে এটি বাজারজাত করে আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আদালত সম্প্রতি এই রাসায়নিকটির ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সরকারকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে মার্কিন বীমা কোম্পানির পণ্য বিক্রি নিয়েও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্রগুলো জানায়, মার্কিন বীমা কোম্পানি মেটলাইফ সম্প্রতি ব্যাংকের মাধ্যমে বীমাপণ্য বিক্রি বা লেনদেন চালুর আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে। এ ছাড়া আগেরবারের মতো এবারও বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে ‘ফিউমিগেশন’ (উপধূপন) বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারে দেশটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির বিষয়ে সেটি দেশে ঢোকানোর আগে বন্দরে ফিউমিগেশন করার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় ‘বলউইভিল’ নামক একটি মারাত্মক পোকা থাকে যা বাংলাদেশের কৃষিসহ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এর বাইরে বরাবরের মতো, মেধাস্বত্ব, ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস, শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা এবং শ্রম আইন সংস্কারের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডায় রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর