শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহীদের হুঁশিয়ারি বিএনপির মাঠে থাকার অঙ্গীকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহীদের হুঁশিয়ারি বিএনপির মাঠে থাকার অঙ্গীকার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে রয়েছে। গতকাল এ বিষয় নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে একদিকে বিদ্রোহীদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে, আরেকদিকে বিদ্রোহীরা বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি বর্ধিত সভা করে কোনোভাবেই নির্বাচনী মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের বৈঠক : গতকাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চসিক নির্বাচনে দলের সমর্থন পাওয়া এবং সমর্থনবঞ্চিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এতে ‘দলের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীরাই চূড়ান্ত থাকবে, বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়াতে হবে’ বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চসিক নির্বাচনে দলের প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাউন্সিলর পদে কেউ নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন  চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র  নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা সবাইকে নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে তা নাকচ করে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের উদ্দেশ করে বলেন, এই নির্বাচনে যারা দলের সমর্থন পেয়েছেন, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের হাই কমান্ডের দেওয়া এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারও নেই। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই একই পরিবারের সন্তান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান। দলে আপনাদের অবদান রয়েছে। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন আপনারা। তবে সবার ওপরে দল। তাই দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে। দুই পর্বের এ বৈঠকের শেষ পর্যায়ে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ চান। তবে তাদের সুযোগ না দিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র  নেতারা বলেন, ৮ মার্চ আইসিসি কনভেনশন সেন্টারে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসবেন। আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তার কাছেই বলতে পারবেন। বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা চিৎকার করে তাদের কথা বলার চেষ্টা করেন। তাদের ক্ষোভের মধ্যেই মঞ্চ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। ভিতরে কথা বলতে না দেওয়ায় বাইরে এসেও বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

বিএনপির বর্ধিত সভা : আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা ভয়ে কাবু হয়ে আছেন। কারণ তারা ভালো করেই জানেন যে, কোনো নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ চলছে না। তাদের যারা মদদ ও অন্যায়ভাবে সহযোগিতা দিয়ে ক্ষমতার চটি ঘুরানোর সুযোগ করে দিয়েছে- সেই প্রশাসনের লোকেরাও আজ ভয়ে কাঁপছে। কারণ তারাও জানে যে, তারা যা করেছে এবং করে যাচ্ছে এটা মারাত্মক অন্যায়। তাই গণতান্ত্রিক নিয়মে বৈধপন্থায় চসিক নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থীর কোনো ভয় নেই। আমরা জিতবই জিতব। দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত নগর বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু এ কথা বলেন।

রেজাউলের কুশল বিনিময় : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণার এখনো পাঁচ দিন বাকি রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় যেতে না পারলেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই তিনি নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন ওলিয়ে কামেল, পীর-মুর্শিদদের মাজার জিয়ারত এবং আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। গতকালও তিনি বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ নগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দুটি ওয়ার্ডে যান।

মাঠে ১৪ ম্যাজিস্ট্রেট : চট্টগ্রাম জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পোস্টার-ব্যানার সরানোর নির্দেশনা ১২ দিনেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রশাসন। চসিকের নির্বাচনী এলাকা বা নগরের বিভিন্ন স্পট থেকে শুভেচ্ছাসংবলিত ব্যানার-পোস্টার অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হলেও প্রার্থীরা স্ব উদ্যেগে অপসারণের চিন্তাও করছেন না। এসব পোস্টার, ব্যানার উচ্ছেদে ইতিমধ্যে দায়িত্বশীল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে নেমেছেন। তবু এখনো দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পোস্টার-ব্যানার। এ অবস্থায় নির্বাচনের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ১৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন।

 ব্যানার-পোস্টার দ্রুত অপসারণ করতে সিটি করপোরেশনকেও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন অফিসের দেওয়া নির্দেশনা ছিল সিটি নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের পক্ষে শুভেচ্ছা বাণী, দোয়াপ্রার্থী-সংবলিত ব্যানার, পোস্টার, দেয়ালিকা, বিলবোর্ড, গেট, তোরণ, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচারসামগ্রী প্রার্থীদের স্ব উদ্যোগে অপসারণ করার। নির্দেশনার পরও নির্বাচনী সরঞ্জাম সরাননি প্রার্থীরা।

 বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ অবস্থায় আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ১৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তারা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবেন।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘দেয়ালে, পোস্টার, ব্যানারসহ নানাবিধ উপকরণ সরানোর জন্য ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছি। প্রতিদিন ২টার পরই উচ্ছেদ করা হয়। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সফলভাবে কাজ শেষ করতে পারব।’

নির্বাচন অফিসে গিয়ে ও সরেজমিনে দেখা যায়, চসিকের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে নগরে প্রার্থীদের শুভেচ্ছাসংবলিত পোস্টারসহ নানা উপকরণ অপসারণের নির্দেশ দিলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে দায়সারাভাবে। অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র হিসেবেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। যারা মনোনয়নপত্র পাননি, মূলত তারা এসব নিয়ে চিন্তাই করছেন না। তা ছাড়া এখনো নগরের অলিগলিতে ঝুলছে অনেকের ব্যানার-পোস্টার।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ২১ নম্বর জামাল খান ওয়ার্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু না হলেও বেশির ভাগ এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম চোখে পড়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী শৈবাল দাশ সুমন, আবদুল মান্নান, প্রকৌশলী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষাণ, জাপার মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ, এনপিপির ড. জাহেদ খানসহ আরও অনেকের পোস্টার, ব্যাানর রয়েছে। এমন প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই শোভা পাচ্ছে পোস্টার-ব্যানার। জামাল খান ওয়ার্ডের ভোটার জাহেদ হোসেন বলেন, ‘কমিশন ব্যানার-পোস্টার অপসারণের নির্দেশনা দিলেও তা মানছেন না অনেক প্রার্থী। উল্টো নতুন নতুন ব্যানার-পোস্টার লাগানো হচ্ছে।’ মাঈনুদ্দিন কাদের লাভলু বলেন, ‘এখনো প্রতীক বরাদ্দই হয়নি। শুরু হয়নি আনুষ্ঠানিক প্রচারও। তার পরও জামাল খানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যানার-পোস্টারে বেশির ভাগ এলাকা ছেয়ে গেছে।’

সর্বশেষ খবর