শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নিমিষেই ভয়ঙ্কর খুনি

মির্জা মেহেদী তমাল

নিমিষেই ভয়ঙ্কর খুনি

তিনি ছিলেন একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। যা আয় করতেন, তা দিয়ে দিন তার ভালোই কাটছিল। কিন্তু  লোভ তার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর খুনি। স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এই ব্যক্তির জীবন কাটে এখন কারাগারের অন্ধকার জগতে। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপার স্যানিটারি মিস্ত্রি  দেলোয়ার হোসেন ফকির পাঁচ লাখ টাকার লোভে পড়ে নিমিষেই খুনি হয়ে ওঠেন। খুন করেন নিজের ফুপা শামীমুর রহমান শামীমকে। তবে যাদের নির্দেশে তিনি খুন করেছিলেন, তারা তাকে আর চুক্তির সেই পাঁচ লাখ টাকা শোধ করেননি। এ অবস্থায় সহায় সম্বল যা ছিল তা বিক্রি করে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। পরে গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। ঘটনাটি বেশ কয়েক বছর আগের। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, টাকার লোভ দেলোয়ারের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। রাজধানীর দক্ষিণ মনিপুর এলাকার একটি খালি ফ্ল্যাট  থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় শামীমের লাশ (অজ্ঞাত পরিচয়) উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয় লাশ। ১০ দিন পর পরিচয় মেলে শামীমের। থানা পুলিশ দীর্ঘ দেড় বছরেও হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের ভার ন্যস্ত করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সমর্থ হয়। ডিবি পুলিশ রাজধানীর মাদারটেক থেকে গ্রেফতার কওে দেলোয়ার হোসেন ফকিরকে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেলোয়ার হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, ওই সময় (ঘটনার সময়)  দেলোয়ার রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে স্যানিটারি কাজ করতেন। একদিন বিকালে শামীম এলাকার দুই যুবককে নিয়ে তার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে পরিচয়  করিয়ে দেয় শামীম নিজেই। তাদের একজনের নাম কামাল। তবে তারা আসার আগেই শামীমের সঙ্গে ছিল তাদের এলাকার  ছেলে বাদশা। শামীমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে রাত হয়ে যায়। এক পর্যায় বাদশা ও কামাল তাকে (দেলোয়ারকে) ডেকে নিয়ে হত্যার কথা জানায়। এজন্য তাকে পাঁচ লাখ টাকার লোভ দেখায়। এতে রাজি হয়ে যায় দেলোয়ার। জবানবন্দিতে দেলোয়ার আরও জানান, গলায় ইলেক্ট্রিক তার দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার সময় শামীম বলেছিল, ‘তোরা আমাকে মাফ করে দে। আমাকে মারিস না, আমার স্ত্রী অসুস্থ।’ হত্যার পরে ভবনের এক কোণে চাদর দিয়ে লাশ ঢেকে রাখা হয়। রাতেই সুবিধামতো সময় লাশ বস্তায় ভরে রিকশায় করে ঘটনাস্থলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, শামীম তার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য পটুয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গিয়েছিল। সেখান থেকে সে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডের সময় শামীমের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা শিরিন আক্তার ছিল অন্তঃসত্ত্বা। পরে শামীমের লাশ উদ্ধার হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর