শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

খেতের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

খেতের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি

নওগাঁর মহাদেবপুরে চলতি বোরো মৌসুমে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে কৃষকরা। ধান খেতে পোকা দমনে এ পদ্ধতি শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কার্যকর। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় বোরো চাষিদের প্রতি একরে কীটনাশক খাতে খরচ কমেছে দেড় হাজার টাকারও বেশি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ২৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা ২৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন করেছেন কৃষকরা। মহাদেবপুর সদর, উত্তরগ্রাম, খাজুর, হাতুড়, চাঁন্দাশ, সফাপুর, ভীমপুর, রাইগাঁ, চেরাগপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানখেতের মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে পাখিগুলো আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি। এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা। পোকা দমনের এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পার্চিং ইংরেজি শব্দ। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকে পার্চিং নামের উদ্ভব। পার্চিং পদ্ধতি কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব। পার্সিং দুই প্রকার- ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং ধইঞ্চা, কলাগাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের এই পদ্ধতি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। উপজেলার ভীমপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী বলেন, ধান লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে জমিতে ডাল পুঁতে দিয়েছি। ওই ডালে পাখি বসে পোকা ধরে খেয়ে ফেলে। ফলে জমিতে পোকা আক্রমণ করতে পারে না। উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর বলেন, পার্চিং পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকদের মাঝে পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার না করে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খরচ কমে যাচ্ছে। ধানখেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। এই পোকা ধান গাছে গর্ত করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মাজরার মথ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ বাচ্চার জন্ম হয়। শুধু একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই লাখের উপরে পোকা ধ্বংস করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর