রবিবার, ৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি মেহেরপুর

আওয়ামী লীগ বিএনপিতে কলহ তীব্র

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

মেহেরপুর জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নিজেদের কলহ এখন তীব্র আকার নিয়েছে। আওয়ামী লীগের যে বিভেদ বর্তমানে তা নিরসনে কেন্দ্র কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওটা তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়েছে। মেহেরপুরে ২টি সংসদীয় আসন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগের অবস্থান সুদৃঢ় বটে। তবে কলহদৃষ্টে মনে হয় আওয়ামী লীগই যেন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। মেহেরপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মেহেরপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমানের বিরোধ বাড়ছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিতসভায় মেহেরপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম,   পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ ডজন খানেক নেতা গরম গরম বক্তৃতা করেন। ওই বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী ফরহাদের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ তোলা হয়। বক্তারা ফরহাদ হোসেনকে এলাকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হবে বলেও হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ, মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগ, মেহেরপুর যুবমহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের একাংশ (মৃদুল) প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও বিভিন্ন সমাবেশে তার আমলের উন্নয়ন ও তার অবস্থান তুলে ধরছেন। সংসদ সদস্য চিহ্নিত ‘রাজাকারপুত্র’ সহিদুজ্জামান খোকনকে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মনোনীত করার পর দল বিভক্ত হয়ে পড়ে। সহিদুজ্জামান খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যকার দূরত্ব কমানোর চেষ্টাই করেননি। অভিযোগ উঠেছে তিনি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, চাকরি বাণিজ্য করেছেন, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন। এতে দূরত্ব দিনদিন বেড়েছে।

বিএনপি : অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় গ্রুপিং আর নানামুখী চাপের কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে  মেহেরপুর জেলা বিএনপি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর  মেহেরপুর জেলা বিএনপির গ্রুপিং প্রকাশ্য রূপ নেয়। বর্তমানে জেলা বিএনপির একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ। অপর দিকে অন্য অংশের নেতৃত্বে আছেন শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দলীয় অফিসের সামনে ছোট ছোট কর্মসূচি পালন করছে তারা। তবে দলীয় নেতা-কর্মীর দাবি  বর্তমান বিএনপি মূলত দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। তবে তারা এও বলেন দলকে মূলত অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন মাসুদ অরুণ। জাতীয় পার্টি : সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির  রাজনীতি মেহেরপুর জেলায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ২০০৮ সালে সরকার গঠন করার পর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের অন্য শরিক দলগুলোর মতো জাতীয় পার্টিকেও এক সঙ্গে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় দিক-নির্দেশনার অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। ভেঙে পড়েছে দলটি। অন্যদিকে, মেহেরপুর জেলায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হলেও ভিতরে ভিতরে চলছে কোন্দল। গত ৫ বছরে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চোখে পড়েনি। জামায়াত : মেহেরপুরে জেলা জামায়াতের প্রকাশ্যে কর্মসূচি না থাকলেও নীরবে দলকে সংগঠিত করে চলেছে। দলকে সংগঠিত করতে যেমন নারী সদস্য সংগ্রহে রয়েছে ব্যস্ততা তেমনি বিভিন্ন  মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে তাদের বৈঠক চলছে। এ ছাড়া জেলার অসহায় দুস্থ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর