রবিবার, ৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

সড়কে টানা গ্যাং

মির্জা মেহেদী তমাল

সড়কে টানা গ্যাং

যাত্রীবেশে তারা শহরের সড়কগুলোতে ঘুরে বেড়ায় প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায়।

বিশেষ করে নির্জন জায়গাগুলোয়। আর সুযোগ পেলেই পথচারী কিংবা রিকশাযাত্রীর কাছ থেকে টান দিয়ে ছিনিয়ে নেয় ভ্যানিটি ব্যাগ কিংবা মুঠোফোন। ওরাই শহরের কথিত ‘টানা পার্টি’ তথা ছিনতাইকারী। শহরে ইদানীং এ টানা পার্টি তৎপর হয়ে উঠেছে। রাজধানীর ৪৯টি থানার ১৩৫টি স্পটে ছিনতাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারলেও ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না। মানুষের নির্বিঘ্নে পথচলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। বিশেষ করে ভোরে এবং সন্ধ্যার পর তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুগদা এলাকায় রিকশায় করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রাণ হারান তারিনা বেগম লিপি নামে এক নারী। এর তিন দিন আগে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে রিকশা আটকে এক দম্পতির কাছ থেকে ব্যাগসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোরে হাই কোর্ট মোড়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক করা ঢাবি শিক্ষার্থী আল-আমিন ও শান্তকে। গত ১৮ জানুয়ারি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরেরর ৩ নম্বর রোডে সকালে রিকশায় করে স্কুলে যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক শিক্ষিকা। ছিনতাইয়ের সময় নারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও ওই ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১৩৮টি চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটে তেজগাঁও বিভাগে ২৮টি। আর সবচেয়ে কম চুরির ঘটনা ঘটে লালবাগ বিভাগে ৫টি। জানুয়ারি মাসে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে লালবাগ বিভাগে ৬টি। আর সবচেয়ে কম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে মিরপুর ও ওয়ারী বিভাগে একটি করে। এই সময়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দুটি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার জন্য সুযোগ পেলেই চুরি বা ছিনতাই করছে। রাজধানীর অন্ধকারচ্ছন্ন সড়ক, ফ্লাইওভার, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশের এলাকায় হরহামেশাই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ পেলেই চোরচক্রের কাছে খবর পৌঁছে যাচ্ছে। বাসা তছনছ করে সর্বস্ব নিয়ে সটকে পড়ছে। ফাঁকা বা অন্ধকারচ্ছন্ন রাস্তায় ছিনতাই হচ্ছে। উপযুক্ত শাস্তি এবং ছিনতাই ও চুরির পেছনের কারণ খুঁজে বের করে তাদের পুনর্বাসনের আওতায় না আনলে এর থেকে স্থায়ী মুক্তি মিলবে না। ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতি সনাতন অপরাধের অংশ। মাদকসেবন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করার সুযোগ ও পূর্ব শত্রুতার জেরে ঘটনাগুলো বাড়ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি চুরি ও ছিনতাইয়ের পেছনের কারণগুলো সমাধানে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এগুলো থেকে স্থায়ী মুক্তি সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর