সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
নারী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে পুরুষদেরও

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে পুরুষদেরও

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে গতকাল সম্মাননাপ্রাপ্তদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী ধর্ষণকারী তো পুরুষরাই। কাজেই পুরুষ সমাজের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ শীর্ষক এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘জয়িতা পদকে’ ভূষিত সফল পাঁচজন নারীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন-আনোয়ারা বেগম, ডা. সুপর্ণা দে সিম্পু, মরহুম মমতাজ বেগম, অরনিকা মেহেরিন ঋতু এবং সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও নারী উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশিত হয়। পরে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সরকার ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা এখন একটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সাবধান থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। দেশবাসী সবাই সেই দিকনির্দেশনা মেনে চলবেন। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। তাহলে যে কোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিদিন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নির্দেশনা দিচ্ছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব সেই নির্দেশনাবলি মেনে চলার।   নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। বর্তমান সরকারের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশের নারী সমাজ তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা ভারোত্তোলন থেকে শুরু করে এভারেস্ট পর্যন্ত বিজয় করে ফেলেছে। তিনি বলেন, খেলাধুলায় আমাদের যেসব মেয়েরা ভালো করছে তাদের আমরা উৎসাহ দিচ্ছি এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছি।  শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পদে কখনো কোনো মেয়েরা পদোন্নতি পায়নি। তবে, প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই সে সময়কার রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলাম, এখানে মহিলা বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে এবং সেই থেকেই শুরু আর এখন অনেক মহিলা বিচারপতি আছেন। সরকারপ্রধান বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর যে কন্টিনজেন্ট কঙ্গোতে আছে, সেখানে তারা খুব ভালো করছে এবং শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর নারী অফিসারদেরই তারা চাচ্ছে। কারণ মেয়েরা সেখানে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য আমি সত্যিকারেই গর্বিত। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকেও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারী ধর্ষণের বিষয়টা শুধু বাংলাদেশ বলে না, এটা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। কাজেই আমি এটা মনে করব এখানে আমাদের যেমন একদিকে সচেতনতা দরকার, সেই সঙ্গে আমাদের পুরুষ শ্রেণি যারা তাদেরও একটু এগিয়ে আসতে হবে। দেশে নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় বেগম রোকেয়াসহ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতু নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই জাতির পিতা নারী অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সংবিধানে তিনি শুধু পুরুষের অধিকার না, নারীদের অধিকারের কথা সমানভাবে বলেছিলেন। এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ একটা সংবিধানে নেওয়া, সেই সময়কার সামাজিক পরিবেশে বা রাজনৈতিক পরিবেশে একটা কঠিন কাজ ছিল। সেই কাজটাও বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন। আমার মনে হয়, আমাদের দেশে একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন আমরা প্রথম আমাদের গঠনতন্ত্রে আমাদের নারীদের অধিকারের কথা এবং আমাদের যে ঘোষণাপত্র সেখানেও আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করেছি। আর কোনো পার্টি এ ধরনের লিখতে পারেনি, যেটি আমরা করেছিলাম। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (নির্যাতিত নারী) সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি (জাতির পিতা) এই নারীদের সম্মাননা দেন, বীরাঙ্গনা হিসেবে উপাধিতে ভূষিত করেন। তাদের মহান অবদান রয়েছে আমাদের স্বাধীনতায় সেই জন্য। কিন্তু তাদের যখন বিয়ে দিতে যায়, আসলে তখনো এখনকার যুগের মতো মানুষ তখন এতটা খোলামেলা হয়নি, একটা মেয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলে মামলা করতে পারে, নালিশ করতে পারে বা বলতে পারে! তখন এই বলাটাও ছিল একটা সামাজিক লজ্জার ব্যাপার। তাহলে তার বাবা-মাকে একঘরে করে ফেলা হতো। অনেক বাবা-মা তাদের পরিচয় দিতে চাননি। মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাননি। যখন এদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো, আমার মা নিজে উপস্থিত থেকে সেই বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, বিয়ের কাবিননামায় বাবার পরিচয়টা কী লিখবে? জাতির পিতা বলে দিয়েছিলেন, লিখে দেবে পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নং বাড়ি, ধানমন্ডি।

 আসলে তখনকার সমাজ ব্যবস্থাটাই ছিল এমন। কোনো বাবা নিলে তার অন্য মেয়েদের আর বিয়েই হবে না। তাদের একটি ঘৃণার চোখে দেখা হতো। অথচ এই মেয়েদের তো কোনো দোষ ছিল না। কাজেই মন-মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার, ইউএন উইমেনের এদেশীয় প্রতিনিধি এবং ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়ক শোকো ইশিকাওয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ খবর