সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

এক যুগেও কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়নি

দল চাইলে আরও সময় বাড়াবে ইসি অগ্রগতি জানাতে দেওয়া হবে চিঠি

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের এক যুগেও কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বড় দলগুলোয় ২০ থেকে ২৬ শতাংশের বেশি নারী প্রতিনিধিত্ব থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে ইসলামী দলগুলো। অনেক দলে ১ ভাগও নারী নেই।  বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, নিবন্ধিত দলগুলো চাইলে এ বিষয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সময় বাড়ানো হবে। এ ছাড়া অগ্রগতি জানাতে দলগুলোকে খুব শিগগিরই চিঠিও দেবে কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০২০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এরপর এক যুগ পার হয়েছে। তবে কয়েকটি দল ২০০৮ সালের পর নিবন্ধন পেয়েছে। তাদের বিষয়ে কী হবে তা নিয়ে ভাবছে ইসি।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ইতিমধ্যে বলেছেন, দল কী করছে না করছে, তা তাদের বিষয়। আমাদের আরপিওতে ২০২০ সালের কথা বলা রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ব্যর্থ হলে তখন বিষয়টি দেখব। কিন্তু কোনো দলই এখনো সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশ আনতে না পারায় আইন সংশোধনের আভাস দেন সিইসি। তিনি বলেন, এখনো সময় হয়নি; কোনো দল নির্ধারিত সময়ে পূরণে ব্যর্থ হলে তখন (আইন সংশোধনের বিষয়ে) বিবেচনা করব। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দলগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে, এখন ২০২০ সালে পূরণ করতে পারবে কিনা, তা-ই দেখার বিষয়। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো নির্দেশনাও আইনে বলা হয়নি। তবে আরপিও সংশোধন করে আবার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। নারী প্রতিনিধিত্বের অগ্রগতির বিষয়ে ইসির উপ-সচিব আবদুল হালিম খান বলেন, কাউন্সিল শেষ করেও দলগুলো নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য দেয়নি। অনেক দল কাউন্সিল শেষ করেছে, অনেকে করবে। এ বছরটি পুরো সময় রয়েছে। এরই মধ্যে ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে দলগুলোর কাছে নারী প্রতিনিধিত্বের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে দলগুলোর কাছে চিঠি দেওয়া হবে। গত ডিসেম্বরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বশেষ কাউন্সিল করেছে। বিএনপি এখনো কাউন্সিল করেনি। জাতীয় পার্টিও কাউন্সিল করেছে। আগের তুলনায় এবার আওয়ামী লীগে বেড়েছে নারী প্রতিনিধিত্ব। তিন বছরের মাথায় ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৬ শতাংশের বেশি হয়েছে আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কমিটিতে ২০ শতাংশের নিচে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে কমিশনকে জানানো হয়েছিল। বর্তমানে ইসির কাছে ৪১টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। ২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বর্তমানে দলের কী অবস্থান, কত শতাংশ পূরণ করেছে তা জানিয়েছে। বাকি ৩০টি দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছে।

সর্বশেষ খবর