সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

গুজবের ভাইরাস

মির্জা মেহেদী তমাল

গুজবের ভাইরাস

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খবর রটে, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। খবরটি ভাইরাল হয়ে যায়। জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। বিপদে পড়ে যায় জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। তাতে তারা জানায়, হাসপাতালে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট। এ ধরনের সংবাদে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. তারেক আজাদ। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই বিপদে পড়েন একজন প্রবাসী। তিনি করোনায় আক্রান্ত রোগী-এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে তার নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের বাসাইলে। ফেসবুকে তাকে নিয়ে লেখালেখি চলে। কয়েকটি ওয়েব পোর্টালেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হয়ে যায়। সুস্থ সবল এই প্রবাসী বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে, তিনি আক্রান্ত নন। পরে তিনি বলেন, আমি করোনাভাইরাসের নয়, গুজবের শিকার। স্থানীয়দের ভুল সন্দেহের তোপে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।’ টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাসিন্দা ওই প্রবাসী বলেন, ‘আমি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ছুটিতে আসি। বিমানবন্দরেও পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে আমার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। বাড়ি আসার পর এলাকার লোকজন শত্রুতা করে আমাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছে। আমি স্থানীয়দের সন্দেহের কারণে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছি। এ ছাড়া বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা আমার নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ায় কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমার স্ত্রী নাকি আমাকে ছেড়ে পালিয়েছে। বিষয়টি আমার জন্য অত্যন্ত মানহানিকর। আমাদের দাম্পত্য জীবন ভালোভাবেই কাটছে।’ গত ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। পোস্টে লেখা ছিল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইতিমধ্যে কয়েকজন এতে মারা গেছে- এ ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচারের পর আতঙ্ক ছড়ায়। নড়েচড়ে বসে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকার আরামবাগ, মগবাজার ও রমনা থেকে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে রাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেয় সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা। সেখানকার অতিরিক্ত কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং টিম যখন দেখেছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তখন আমরা কয়েকটির সোর্স বের করি। এরপর আমরা তাদের ডেকে এনে বুঝিয়েছি কাউন্সেলিং করেছি, যে তাদের এ ধরনের আচরণে জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। এর পরিণতি কতটা খারাপ হতে পারে। তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলেছে ওই পোস্টগুলো তারা তুলে নেবে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করে পোস্ট দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকেই সেই খবর জানানো হবে, তাই তার আগে কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। নানাভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এতে করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তারা গুজব রোধে কার্যক্রর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন। গত রবিবার বিবিসি বাংলার পরিক্রমা অনুষ্ঠানে সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমিন রহমান বলেন, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে না। বরং  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিলরের এই সাইকোলজিস্ট বলেন, যে পরিমাণে সবার মধ্যে তথ্য ছড়ানোর দরকার তা হচ্ছে না। ফলে মানুষের মনে সাইকোলজিকাল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ব্যক্তির সাধারণ জ্বর হলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে, সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এ জন্য সঠিক তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, সচেতনতার জন্য আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নাটকের মাধ্যমে, দোকান, বস্তি, রাস্তায় যেয়ে মানুষের মধ্যে প্রচারণা করতে। তাহলে সবাই করোনাভাইরাস থেকে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি মানসিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর