মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্রহ্মপুত্র যমুনা তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই চর

ন দী র কা ন্না

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

ব্রহ্মপুত্র যমুনা তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই চর

গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বড় নদী যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানি শুকিয়ে গেছে। এতে নদ-নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি হ্রাস পাওয়ায় গাইবান্ধা থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও জামালপুর জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য অন্তত ১৩টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে নৌপথে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ছোট নদী ঘাঘট, আলাই, করতোয়া প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদ-নদীগুলোর এখন যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই পানির বদলে বিস্তীর্ণ বালুচরের দৃশ্য।

স্থানীয় মাঝিরা জানান, নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলায় ব্রহ্মপুত্রের সবচেয়ে বড় ঘাট ‘বালাসী নৌঘাট’। পানি না থাকায় এখান থেকে ১৭টি রুটে যাত্রীবাহী যান্ত্রিক নৌকাগুলো কোনোমতে যাতায়াত করছে। আগে ৩০ থেকে ৩২ রুটে নৌযান চলাচল করত। বর্তমানে এ ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও কর্তীমারি, সদর উপজেলার মোল্লার চর, কুন্দেরপাড়া ও চর পারদিয়ারা, ফুলছড়ি উপজেলার সানন্দবাড়ী, ফুটানিবাজার, জিগাবাড়ী, হরিচন্ডী, খোলাবাড়ী, খাটিয়ামারি এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, ঘুটাইল, দেওয়ানগঞ্জ প্রভৃতি রুটে নৌচলাচল করছে। কিন্তু আগে যেখানে একেকটি রুটে চারটি নৌকা চলাচল করত, এখন সেখানে দুটি করে নৌকা চলাচল করে। জেগে ওঠা চরের কারণে ঘুরপথে নৌকাগুলো চলাচল করতে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিগুণ সময় লাগছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসব এলাকার মানুষকে দীর্ঘ চরে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে পণ্য পরিবহন এবং রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা নদী এলাকার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও গাইবান্ধা সদরের কিছু অংশে জেগে ওঠা  ধুধু বালুচরে ভুট্টা, বাদাম, কাউন চাষ করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের যে ক্ষীণ ধারা বয়ে যাচ্ছে, সেখানে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট থেকে পৌঁছতে প্রায় দুই কিলোমিটার চর হেঁটে যেতে হয়। পরিবেশ আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘট ও আলাই নদীতে আগেও পানি শুকিয়ে যেত, তবে পানিশূন্য হতো না। কিন্তু ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে অক্টোবর মাস থেকেই নদী পানিশূন্য হতে শুরু করে। বর্ষা ঋতুর শুরুতে আবার পানি আসতে আরম্ভ করে। বর্ষার সময় এসব নদীতে আগে যেমন দেশি মাছ পাওয়া যেত, দীর্ঘ সময় পানি না থাকার কারণে নদীতে সে রকম মাছ পাওয়া যায় না। পলাশবাড়ী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের খরস্রোতা করতোয়া এখন প্রায় মৃত। করতোয়া নদী দিনাজপুর, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা হয়ে প্রবেশ করেছে বগুড়া জেলায়। করতোয়া নদী উল্লিখিত জেলার কোথাও করতোয়া আবার কোথাও আখিরা নামে পরিচিত। পলাশবাড়ীর বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল মালেক বলেন, বছরের পর বছর নদীর তলদেশ বালু দিয়ে ভরাট হয়ে উঠেছে। ভরাট হওয়ার জন্য প্রতিবছর বন্যায় করতোয়া নদী পানি ধারণ করতে না পেরে উছলে যায়। এ জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে নদী খনন। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডেও (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, শীত মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ কমতে থাকে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্রে নদীর ভাঙন রোধ, তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচলের জন্য ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বালাসী ঘাটে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর