মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা ৩০ লাখ টাকায় বাবার চুক্তি

বাবা-মাসহ গ্রেফতার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে নিজের শিশুকন্যা ইলমাকে খুনে সহায়তা করেন বাবা আবদুল মোতালেব। শুধু তা-ই নয়, পরিকল্পনা মোতাবেক বাড়ির পাশে ধানখেতে ডেকে নিয়ে ইট ও মুগুর দিয়ে মাথা থেঁতলে এবং গলা টিপে ইলমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ইলমার দুলাভাই বাবুল ও ফুফাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত-আটজন। এ সময় বাবা মোতালেব দাঁড়িয়ে থেকে হত্যায় সহায়তা করেন। যদিও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেও চুক্তির ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা পান ঘাতক বাবা। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর ইলমা হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ। এর আগে সিআইডির একটি টিম নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে বাবা আবদুল মোতালেব, মা মঙ্গলী বেগম, ফুফাতো ভাই মাসুম মিয়া, গ্রুপ লিডার শাহজাহান ভূঁইয়া ও মো. বাতেন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে মাসুম আদালতে এরই মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ইলমা হত্যায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ ব্যর্থ হলে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের একপর্যায়ে নিহত ইলমার ফুফাতো ভাই মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ইলমার মৃতদেহ নরসিংদীর বাহেরচর গ্রামের একটি ধানখেতে পাওয়া যায়। ইলমা বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তদন্তে জানা গেছে, নরসিংদীর বাহেরচর নামক একটি দুর্গম এলাকায় শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব বিরাজমান ছিল। শাহজাহান গ্রুপের সদস্য ইলমার ফুফাতো ভাই মাসুমের সঙ্গে বাচ্চুপক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তানিয়াকে মাসুম তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু তানিয়ার বাবা দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তানিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, মাসুমের ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এরপর মূলত দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। বাচ্চুগ্রুপের সদস্যদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে শাহজাহানের বাড়িতে ২০১৫ সালের ১ মার্চ রাতে মাসুমসহ ১৩ জন বৈঠক করেন। প্রতিশোধ নিতে একটি হত্যাকান্ড ঘটিয়ে বাচ্চুগ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোতালেবের কাছে তার মেয়ে ইলমাকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করার প্রস্তাব দেন গ্রুপ লিডার শাহজাহান। মোতালেব ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে হত্যায় রাজি হন। ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই ও অন্যরা মিলে তাকে টাকা দেন সদাই করার জন্য। টাকা পেয়ে ইলমা বাড়ির পাশে নুরার দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফিরছিল।

পথে দুলাভাই বাবুল ও ফুফাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত-আটজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইলমাকে পার্শ্ববর্তী একটি ধানখেতে তুলে নিয়ে যায়। পরে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে ইলমাকে নৃশংসভাবে হত্যা কওে তারা। এ সময় ইলমার বাবা মোতালেব পাশে অবস্থান করছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম জানান, ইলমার বাবা ওই সময় আগে টাকা ও পরে কাম সারতে বলে টাকা দাবি করেছিলেন।

ইলমা হত্যার ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে তার বাবা মোতালেব বাদী হয়ে বাচ্চুগ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় ওই বছরের ৩১ মার্চ হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া ইলমার বাবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দুই বছর আগে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, যা তদন্তে উঠে আসে।

সর্বশেষ খবর